মনোনয়ন টেনশন শেষে মনোযোগ একদফার আন্দোলনে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে স্পষ্ট হয়েছে কোন কোন দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আবার বিএনপির কতজন নেতা দল ছাড়ছেন না সেই ‘বড় পরীক্ষাটিও’ শেষ হয়েছে। এখন দলটি পুরোপুরি মনোযোগ দিচ্ছে আন্দোলনে। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের এই আন্দোলনে শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না তাদের এক ছাতার নিচে আসার চেষ্টা চলছে। এরপর সবাইকে নিয়ে নতুন আঙ্গিকে কীভাবে কর্মসূচি গ্রহণ ও সফল করা যায় তা নিয়ে ভাবছে বিএনপি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা বলেন বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।

তারা বলেন, আন্দোলনে শরিক দলগুলোর বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর নেতাদের নিয়ে ইতিমধ্যে সংলাপ হয়েছে। সে সংলাপে সবাই নিজ নিজ মতামত দিয়েছেন। এছাড়া গতকাল আন্দোলনে শরিক ৩৯টি দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামনে আরও বৈঠক হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলো আগামী রবিবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে তাদের মতামত নেওয়া হবে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশ আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি সরকারের ভয়ভীতি ও প্রলোভনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এমন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সফল হয়েছেন বলে শেষ পর্যন্ত মনে হয়েছে। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ায় একটা কষ্টসাধ্য কাজ সমাপ্ত করা গেছে। এখন আমাদের মনোযোগ হবে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম।’

তিনি বলেন, ‘চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের বাইরে নানা কৌশলে সরকারকে আমরা মোকাবিলা করেছি। এখন আগামী দিনের কর্মসূচিতে কীভাবে রাজপথে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা চলছে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আবু জাফর ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, ধামরাই পৌরসভা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ আরও কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া দলের আরও কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে আলোচনায় এসেছেন। এর মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, দলের বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিএনপির সাবেক নেতা নাজিম উদ্দিন, বগুড়ার মোহাম্মদ শোকরানা, বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম।

এদিকে গতকাল বিকেলে তোপখানা রোড শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সভায় অংশ নেওয়া একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক দলগুলোকে নির্বাচনে নিতে পারেনি। এটা আমাদের বড় অর্জন। এখন আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে নিজেদের মধ্যে আমরা আলোচনা করেছি। আগামীর আন্দোলন জোরদার করা ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই।’

আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘সরকার বহু চেষ্টা করে কাউকে নির্বাচনে নিতে পারেনি। এখন নির্বাচনের বাইরে রয়ে গেছে অনেক রাজনৈতিক দল। আমরা চাই দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে নিয়ে আসতে। সে উদ্যোগ চলছে।’

Exit mobile version