স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কি আওয়ামী লীগে কোন্দল বাড়াবে, পর্ব ০৩

প্রার্থীরা যা বলছেন

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৯টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী নেতা তাকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মিস্টার হক।

“নেত্রীর কথা মতো নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ভোটে দাঁড়িয়েছি। নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। কাজেই নির্বাচনে আমি জয়ী হবো বলে আশা করছি।”

তবে কেন্দ্র থেকে না চাইলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন না বলেও মিস্টার হক জানান।

“নেত্রী না চাইলে প্রার্থী হতাম না। এমন কী এখনও যদি তিনি বলেন বসে যেতে, আমি বসে যাবো। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অতীতেও কখনও যাইনি, আগামীতেও যাবো না”, বলেন তিনি।

এদিকে, ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। কিন্তু তিনি পাননি। দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিস্টার আজাদ।

“এলাকার মানুষ এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাকে চায়। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের মাঠকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে যাতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। সেজন্যই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আশাকরি আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে”, বলেন তিনি।

কিন্তু দল যদি শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তখন কি নির্বাচন থেকে সরে আসবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের সাথে কথা বলেই প্রার্থী হয়েছি। কাজেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।”

দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে সেক্ষেত্রে তাদেরকে দল থেকে চাপ প্রয়োগ করে হয় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, অথবা বিদ্রোহী প্রার্থী তকমা দিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কিন্তু এবারের নির্বাচনে সেটি দেখা যাচ্ছে না, বরং দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে বাকিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের অনেকেই ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দেওয়ায় ভোট ভাগের শঙ্কা নিয়ে তারা সরাসরি কথা বলতে চাচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা এম এ লতিফ। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।

তার আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, “আগে আমরা সবাই একজোট হয়ে নির্বাচন করতাম। তবে এবার দলের সিদ্ধান্তের কারণে নতুন নতুন অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এটি এক অর্থ ভালোই। কারণ প্রার্থী যত বেশি হবে, ভোট তত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, ভোটারদেরও অংশগ্রহণ বাড়বে।”

“নেত্রী বলেছেন, এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তারাই টিকে থাকবে। গত তিন মেয়াদে আমি অনেক কাজ করেছি। কাজেই আবারও নির্বাচিত হবো বলে আশা রাখি।”

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদকে নিয়ে চিন্তিত নন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।

“উনাকে আমি ডামি প্রার্থী মনে করি। উনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু দেখছি না, বরং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।”

বিএনপি অংশ না নিতে চাওয়ায় এবারের নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলাটা আওয়ামী লীগের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচন জমিয়ে তুলতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

“আমরা চাই নির্বাচন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং উৎসবমুখর হোক। ভোটাররা অংশগ্রহণ করুক। এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের নির্বাচনী কৌশল। আর এ জন্যই দলের মধ্যে যারা মনোনয়ন পায়নি, তারা চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারে”, বলছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, তখন কি আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রাখতে চাইবে?

এই প্রশ্নের জবাবে মিস্টার নাছিম বলেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখনও সময় বাকি আছে এবং নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য একাধিক পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। সময় হলে প্রয়োজনের নিরিখে নির্বাচনী কৌশল পরিবর্তন করা হবে।”

Exit mobile version