চরম সংকটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিবার; চাকরি ও ব্যবসা লাটে
দৈনিক সমকালের প্রতিবেদন থেকে
একের পর এক অবরোধ, ফাঁকে ফাঁকে হরতাল। চলেছে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন। তবে যারা দিয়ে যাচ্ছে এ কর্মসূচি– সেই রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মী রাজপথেও নেই, ঘরেও নেই। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে অধিকাংশ ফেরারি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে কাটছে যাযাবর জীবন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান জেনে যাবে– এ শঙ্কায় মোবাইল ফোন থেকে সিমটাও খুলে রেখেছেন অনেকে। তবু থেমে নেই নেতাকর্মীর ঘরে ঘরে পুলিশের তল্লাশি। অভিযানে গিয়ে নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠছে হরহামেশা। কখনও কখনও তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্বজনকে।
ধরপাকড়ের কারণে দৌড়ের ওপর থাকায় কর্মস্থলে না গিয়ে চাকরি খুইয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারও কারও দোকানের মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসা উঠেছে লাটে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ফেরারি হওয়ায় সংসারের চাকা থমকে গেছে অনেক পরিবারে। ‘নাশকতা’ মামলার আসামি হয়ে কেউ কেউ এরই মধ্যে কারাবন্দি। অনেকেরই জুটছে না জামিন।
ঢাকার ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে হাঙ্গামার পর থেকে হয়ে যায় রাজনীতির বাঁকবদল। ওই সংঘাতের পর বিএনপির নেতাকর্মীর নামে-বেনামে দেওয়া হয় একের পর এক মামলা। বিএনপি ও সমমনা দলের ডাকা অবরোধ-হরতাল ঘিরে শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নামে সাঁড়াশি অভিযানে।
খুলনায় অভিযানের নামে হয়রানি
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা। পুলিশের অভিযান শুরুর আগেই ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই নেতা। তবু গত ২ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে মনার শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তাঁর স্ত্রী আফরোজা আকতার দাবি করেন, বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই জানিয়ে পুলিশ সদস্যদের সকালে আসতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। অনুরোধ না রেখে তারা শাবল দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। পরে তিনি দরজা খুলে দিলে পুলিশ চরম দুর্ব্যবহার করে।
খুলনা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা সাগরের বাড়িতে গত ১৯ নভেম্বর রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। নাশকতার নতুন চারটি মামলার আসামি হয়ে ঘরছাড়া সাগর। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, পুলিশ লাথি মেরে দরজা ভেঙে ফেলে; পরিবারের সদস্যদের গালাগাল ও অশোভন আচরণ করে।
আত্মগোপনে রয়েছেন পাইকগাছা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক। তাঁকে ধরতে দু’দফা পাইকগাছার বাসায় অভিযান চালানো হয়। শেষমেশ গত শনিবার রাতে নগরীর নিরালার পারিবারিক বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। প্রতিটি অভিযানেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়।
অজানা স্থান থেকে ফোনে এনামুল হক বলেন, আমি পলাতক জেনেই বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ প্রথমে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চালায়, তছনছ করে। এসব হয়রানি সহ্য করা যায় না। পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুদের হয়রানি করে কী লাভ– বুঝতে পারছি না!
২২ দিন পালিয়ে থাকার পর গত ২০ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন ফুলতলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশার। গত ১৬ নভেম্বর তাঁর বাড়িতে বোমা হামলা হয়। গ্রেপ্তারের পর গত শুক্রবারও তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। আবুল বাশারের এক স্বজন বলেন, ধরা পড়ার আগে যদি পুলিশ বাড়িতে আসত, বুঝতাম বাশারকে ধরতে আসছে। এখন গ্রেপ্তারের পরও পুলিশ আসার কারণ বুঝতে পারছি না।
শুধু শফিকুল আলম মনা, নাজমুল হুদা সাগর, এনামুল হক বা আবুল বাশারই নন; পলাতক জীবন কিংবা গ্রেপ্তার হয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না বিএনপি নেতাদের পরিবারের সদস্যরা। অভিযানের নামে বাড়ি ভাঙচুর, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বৃদ্ধ ও শিশুদের নাজেহাল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের। ধরপাকড় শুরুর পর থেকে খুলনা মহানগর, জেলা, থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটির প্রায় সব নেতা আত্মগোপনে। তার পরও কয়েকটি স্থানে নেতাকে না পেয়ে স্বজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফারুক হোসেনের বাসায় তল্লাশি শেষে পুলিশ হুমকি দিয়ে গেছে, ফারুককে না পেলে ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে যাবে।
খুলনা জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোল্লা কবির হোসেনকে গ্রেপ্তারে গত ২১ নভেম্বর ডুমুরিয়ার উলা বাজারে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তাঁর ভাগনে জাফর শেখকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নাছিম শেখকে ধরতে গত ১৫ নভেম্বর তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। নাছিম শেখকে না পেয়ে তাঁর ভাইয়ের ছেলে রিমন শেখকে নিয়ে যায় পুলিশ।
খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, আমরা আত্মগোপনে থেকে আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছি। নেতাকর্মীকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় মহাসমাবেশের পর এক মাসে খুলনার ৯ থানায় ২৩টি এবং মহানগরীর আট থানায় সাতটি নাশকতার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪ হাজার ৪২৬ নেতাকর্মীকে। গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৮০ নেতাকর্মী।
সার্বিক বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। এসব রাজনৈতিক অভিযোগ।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে পারছেন না সিলেটের সোহেল রাজা
সোহেল ইবনে রাজা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। ডজনখানেক মামলা ঝুলছে মাথার ওপর। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, তবে ফেরারি জীবনের কারণে স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছেও নিতে পারছেন না। সোমবার দক্ষিণ সুরমার নিজ বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে এক ঘনিষ্ঠজনের মাধ্যমে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এক মাসে ৮টি মামলা হয়েছে তাঁর নামে। এর আগের আরও ৪টি মামলা রয়েছে। এক দফা আন্দোলন শুরুর পর আর ঘরে যেতে পারছেন না। পুলিশ সবসময়ই দৌড়ের ওপর রাখছে। পান থেকে চুন খসলেই মামলা দিচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কুহিনুর চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, এক মাসে থানায় ১১ মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন। এর পর আর ঘরে যেতে পারেননি। সোমবার ফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর উপজেলার ৩২ নেতাকর্মী জেলে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক তাঁর এলাকায় হওয়ায় কর্মীরা প্রতিদিনই মাঠে নামেন। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হচ্ছে বেশি।
শুধু কুহিনুর ও সোহেল রাজা নন, অনেক নেতাকর্মী এখন বাড়িছাড়া। কেউ কেউ হয়েছেন গ্রেপ্তার। এর মধ্যে তেতলি এলাকার বদরুল, সুরুজ মিয়া ও দাউদপুরের আলী আকবরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমকাল। এর মধ্যে যুবদলকর্মী আলী আকবর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পুলিশের ভয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে চাননি। আশপাশের লোকজন ও পরিবারের দেওয়া তথ্যমতে, আলী আকবর কারাগারে থাকায় অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, রোববার রাত থেকে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফের খোঁজ মিলছে না। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। আমাদের ধারণা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে।
ময়মনসিংহে লাটে উঠেছে যুবদল নেতা হীরার ব্যবসা
হালুয়াঘাট যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান খান হীরা। উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের নাগলা বাজারে তাঁর আছে ‘হীরা এন্টারপ্রাইজ’ নামে দোকান। ২৮ অক্টোবর থেকেই ফেরারি হীরা। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঝুলছে তালা। তবে বিএনপির আন্দোলনের সমর্থনে মাঝে মাঝে ফেসবুকে ভিডিওচিত্রে দেখা যায় হীরাকে। এ পরিস্থিতিতে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্ত্রী শিরিন আক্তারের।
শিরিন আক্তার জানান, তাঁর স্বামীর নামে চারটি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। পুলিশসহ অপরিচিত অনেকে প্রায় তাঁর খোঁজে আসে। স্বামীকে না পেয়ে সন্তানকে নিয়ে যেতে পারে এ ভয়ে ছেলেকেও দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, স্বামীর সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করতে পারছি না। এক মাসের মধ্যে একবার এসেছিল এক ঘণ্টার জন্য। কোথায় থাকে, কীভাবে আছে তাও জানি না।
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এম বি রায়হান। ধারা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘বাহার মেডিসিন কর্নার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মোবাইল ফোনে রায়হান বলেন, আমার নামে দুটি মামলা রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসতে পারছি না। বাড়িতে প্রায়ই তল্লাশি চালায়। পুলিশের আতঙ্কে বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটাচ্ছি। এক মাস ধরে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখতে পারছি না।
হালুয়াঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসেম বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে থানায় নতুন একটি নাশকতার মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপির রাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’
বরিশালের গৌরনদীর শরিফাবাদ গ্রামের হেলাল সরদার পেশায় দিনমজুর। তাঁর একার আয়ে চলে মা, দুই সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার। গত ২৮ অক্টোবরের পর হেলাল আত্মগোপনে। নিদারুণ আর্থিক কষ্টে আছে তাঁর পরিবার। হেলাল সরদার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। হেলালের মতো কয়েক হাজার নেতাকর্মী এখন পালিয়ে রয়েছেন। যারা পালাতে পারেননি তাদের বেশির ভাগ হামলার শিকার হয়ে বিছানায় শয্যাশয়ী।
বরিশাল-১ আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই গৌরনদীতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি অঘোষিত নিষিদ্ধ। তবে বিএনপির কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের মতো গোপনে পরিচালিত হয়।
দলীয় কর্মসূচিতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর হামলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি ভাঙচুর-দখল গত ১৫ বছরে গৌরনদীতে নিয়মে পরিণত হয়েছে। নেতাকর্মীরা জানান, এবার ২৮ অক্টোবরের এক সপ্তাহ আগে এলাকায় বিএনপি নিধন শুরু হয়। মহাসমাবেশে যারা গিয়েছিলেন, তাদের বেশির ভাগই আর এলাকায় ফেরেননি। যারা ছিলেন তারা একের পর এক হামলা-মামলায় এলাকা ছেড়েছেন। এখন পুরো উপজেলা খুঁজেও বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মীর হদিস মেলে না।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বায়েজিদ হাসান মহাসমাবেশের পরদিন ঢাকায় বসে খবর পান, মাহিলারা বাজারে তাঁর ছোট ভাই মিরাজুলের ওষুধের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে স্থানীয় যুবলীগ। এ তথ্য জানিয়ে বায়েজিদ জানান, বাজার কমিটিকে বলে ভাইয়ের দোকানটি খুলতে পেরেছেন। এলাকায় ফিরতে না পারায় তাঁর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দোকানটি এখনও বন্ধ। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় অর্থকষ্টে আছেন।
একই দিন রাতে বাটাজোর বাজারে বিএনপি নেতা আজাদ মৃধার শাড়ি-কাপড়ের দোকান লুটের অভিযোগ করা হয় স্থানীয় যুবলীগের বিরুদ্ধে।
গৌরনদী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ফরিদ মিয়া জানান, উপজেলায় পদধারীরা ২৮ অক্টোবরের এক সপ্তাহ আগেই এলাকা ছেড়েছেন। তিনি জানান, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে তাঁর মিষ্টির দোকানটি এক বছর আগে আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়েছে।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জয়নাল আবেদীন বলেন, বিএনপির কারও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়নি। তারা মিথ্যাচার করছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঘরছাড়া দুই শতাধিক নেতাকর্মী
বিভিন্ন সময় সীতাকুণ্ড বিএনপি আন্দোলনে সরব হলেও এবার দলটির দুই শতাধিক নেতাকর্মী আত্মগোপনে। গায়েবি মামলা ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে গা-ঢাকাও দিয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, কোনো গায়েবি মামলা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় মামলা দিয়েছে, পুলিশ ওই মামলা শুধু রেকর্ড করেছে।
গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে সীতাকুণ্ড থানায়। গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নুনাছড়া এলাকায় একটি ট্রাকে ককটেল বিস্ফোরণ ও অপর মামলাটি গত ১৩ নভেম্বর সলিমপুরে সংঘটিত হামলার ঘটনায়। মামলার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা তেমন রাস্তায় নামতে পারেনি। মুখোশধারী অনেকে বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আর এসব ভয়ভীতির পেছনে পুলিশের হাত রয়েছে বলে বিএনপির দাবি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ছলিমপুরে গায়েবি মামলায় আমাকেসহ বিএনপির ৩৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অথচ সেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এ ছাড়া ট্রাক পোড়ানোর ঘটনায়ও বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আগে দেওয়া সব ক’টি মামলায় জামিনে রয়েছি। তবে নতুন নতুন গায়েবি মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছি না।’ ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার খোরশেদ আলম বলেন, ‘পুলিশি হয়রানি ও মামলার কারণে তিন মাস ধরে ঘরছাড়া। আমার নামে মামলা ২০টি। এসব মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না।’
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, পুলিশ কোনো গায়েবি মামলা করেনি। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় মামলা করেছে। কাউকে হয়রানি করার প্রশ্নই আসে না।
পাবনায় নেতাকর্মীর পলাতক জীবন
ছাত্রদল পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান প্রিন্সের পৈলানপুরের বাড়িতে পুলিশ গত সপ্তাহে তল্লাশি চালায়। এ সময় তাঁর মা নারী সাংবাদিক করুনা নাসরিনের সঙ্গে পুলিশ অশোভন আচরণ করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের কুঠিপাড়ার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে না পেয়ে ছোট ভাই শহিদুল হক টুটুল বিশ্বাসকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁর ৮৪ বছরের বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে পুলিশ খারাপ ব্যবহার করে বলে শিমুল বিশ্বাস অভিযোগ করেন।
পাবনা জেলা যুবদল নেতা আবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ এক মাস ঘরছাড়া। রাতে একেকদিন একেকজনের সিঁড়ির নিচে অথবা চিলেকোঠায় ঘুমাই। ছেলেমেয়েসহ পরিবারের খোঁজ রাখতে পারছি না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে অবস্থান শনাক্ত হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। আমি ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। বাড়িতে খাবার নেই। রাজনীতি করতে এসে পরিবারসহ এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনশি বলেন, সম্প্রতি পাবনায় বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। সেসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা করছে। কোনো অশোভন আচরণের অভিযোগ কেউ করেনি।