করোনাভাইরাসের নতুন একটি উপধরন অমিক্রন বিএফ.৭। অন্য ধরন ও উপধরনগুলোর চেয়ে নতুন এই উপধরনের মানবদেহে প্রবেশ করার এবং রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশি।
অন্যান্য উপধরনের সংক্রমণের মতোই প্রাথমিকভাবে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং অত্যধিক ক্লান্তি দেখা দেয়। কারও কারও ক্ষেত্রে বমি আর ডায়রিয়াও হতে পারে।
এই উপধরনে সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে গড়ে ১০-১৮ জন সংক্রমিত হতে পারেন। ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসার পর দ্রুতই উপসর্গ দেখা দেয়। যাঁদের আগে করোনা সংক্রমণ হয়েছে বা যাঁরা ইতিমধ্যেই করোনার টিকা নিয়েছেন, তাঁদের সংক্রমিত করার ক্ষমতাও এর অনেক বেশি।
তা ছাড়া উপসর্গবিহীন বাহকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, বয়স্ক মানুষ কিংবা যাঁরা কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত (যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে এমন ব্যক্তি), তাঁদের ক্ষেত্রে এই উপধরন জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিএফ.৭–এর খোঁজ অনেক দেশেই মিলেছে। তবে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে চীনে, এক দিনে তিন কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। করোনা অতিমারির শুরু থেকেই চীনে ছিল ‘জিরো কোভিড’ নীতি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেখানে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন-উপধরন দিয়ে সংক্রমণ কম হয়েছে (সংক্রমণ হলে ‘ন্যাচারাল ইমিউনিটি’ তৈরি হতো, অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবেই কিছুটা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টি হতো)।
এর ফলে ‘হাইব্রিড ইমিউনিটি’ বা মিশ্র রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, টিকা নেওয়ার ফলে কেবল নির্দিষ্ট কিছু ধরনের বিপক্ষেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিল করায় চীনে সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে।
যদিও বিএফ.৭ সংক্রমণের ভয়াবহতা বা মৃত্যুঝুঁকি অন্য ধরন-উপধরনের তুলনায় কম, তবু চাই সচেতনতা। সরকারি নির্দেশনামাফিক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা নিন। সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, জটিল রোগে আক্রান্ত, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বারা টিকার তৃতীয় ডোজের চার মাস পর চতুর্থ ডোজ নিতে পারবেন। টিকা নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিকল্প নেই।
চীন ও ভারতে বিএফ.৭ উপধরনটি শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশেও এই উপধরন দিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, হাইব্রিড ইমিউনিটির কারণে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মৃদু উপসর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। অনেকে উপসর্গবিহীনও থাকতে পারেন।