মোক্ষম সময় না এলে আরো অন্তত ছয় মাস কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। এ সময়টাতে আন্দোলনের গতি ঠিক রেখে যুগপৎ কর্মসূচি কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে কর্মপন্থা তৈরি করছে দলটি।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইস্যুভিত্তিক জনসম্পৃক্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করছেন না দলের নেতারা। কিন্তু এমন সাদামাটা কর্মসূচিও দিতে চান না যাতে নেতাকর্মীদের মধ্যে আন্দোলনের ব্যাপারে অনীহা তৈরি হয়।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর ও জেলা বাদে ৭৯ সাংগঠনিক জেলায় গণমিছিল করবে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতারা এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন। এরপর ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল হবে। এসব কর্মসূচি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎভাবে পালন করবে।নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। ৩০ ডিসেম্বরের পর কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা অবশ্য নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়েছেন। কারণ গত কয়েক মাস আন্দোলনের যে গতি ছিল, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের পর তা ছন্দ হারিয়েছে। ঢাকার সমাবেশ থেকে ব্যতিক্রমী কিংবা বড় ধরনের কর্মসূচির প্রত্যাশা ছিল নেতাকর্মীদের। কিন্তু সমাবেশ থেকে গণমিছিলের ঘোষণা আসায় কিছুটা হতাশও হয়েছেন তাঁরা।
দলের নেতারা মনে করছেন, ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় সমাবেশে বাধা পেরিয়ে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফল করেছেন। একেকটি বাধার ঘটনা নেতাকর্মীদের মধ্যে জেদ তৈরি করেছে। ফলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠেন। আন্দোলনকে ওই ধরনের ‘তুঙ্গে’ নিয়ে এখন আবার সাদামাটা কর্মসূচি নেওয়ার কারণে ছন্দপতন হয়েছে।
বিভাগীয় গণসমাবেশের পর কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে জেলা নেতাদের মতামত নিতে কয়েক মাস আগে ধারাবাহিক বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ওই সব বৈঠকে লং মার্চ, রোড মার্চ, উঠান বৈঠক, হাটসভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির প্রস্তাব আসে। এবারের কর্মসূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে এসব প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানান দায়িত্বশীল নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে আন্দোলনের গতিও পরিবর্তন হয়। এখন আমরা কঠোর কর্মসূচিতে না গেলেও পরিস্থিতি কখন আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করে তা কেউ বলতে পারবে না। রাজনীতিতে ছোট ছোট কর্মসূচির মাধ্যমে বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। ’
বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার সমাবেশের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপত্ভাবে করা হবে।
ওই নেতা বলেন, ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর যুগপত্ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নতুন কর্মসূচি দিতে হবে। এমন কর্মসূচি বিএনপি গ্রহণ করতে চায়, যাতে আন্দোলনের যে গতি ছিল তা একেবারে কমে না যায়। সেই ভাবনা থেকে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘বিব্রতকর’ ঘটনা, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে রাশিয়ার বিবৃতি এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের চার দফা জামিন নাকচের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি।