আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন,কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সাধারণ সম্পাদকের পদ সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। কর্মী-সমর্থকেরাও এই পদে কে আসছেন, তা জানতে বেশি আগ্রহী, এই পদ নিয়ে আলোচনাও বেশি। কিন্তু বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টানা তিন মেয়াদে এই পদে থেকে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে যাচ্ছেন, নাকি নতুন কেউ আসছেন—এই প্রশ্নের উত্তর এখন পর্যন্ত অজানা।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আর মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কেউ নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার হিসেবে ঘোষণা দেননি। নিজের অনুসারী–শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে এই পদ পেতে আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন নেতাদের অনেকে।
তবে প্রকাশ্যে তাঁরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না, নীরব থাকেন।এর কারণ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী নেতারা দলীয় প্রধানের ‘সবুজ সংকেতের’ অপেক্ষায় রয়েছেন।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এবারের আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সাদামাটা হবে—এটি আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকটা প্রথা ভেঙে এবার জাতীয় সম্মেলন দুই দিনের পরিবর্তনে এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে আয়োজনে বাহুল্য বা চাকচিক্য কমলেও সম্মেলন নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের আগ্রহের কমতি নেই।
২৪ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হবে) নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
অবশ্য বরাবরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন হয় আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে। ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের উদাহরণ খুব কম। এবারও আলোচনার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু প্রথম আলোকে বলেন, বড় ধরনের পরিবর্তন বা চমক হয়তো দেখা যাবে না। তবে একটি সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দলে গতি সঞ্চার হয়। নির্বাচনের আগে এই সম্মেলন দলকে চাঙা করবে। তিনি বলেন, সভাপতি পদে পরিবর্তন হবে না। এ জন্য হয়তো সাধারণ সম্পাদক নিয়ে কিছুটা আগ্রহ বেশি থাকে।
আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনই কোনো না কোনো কারণে আলোচিত হয়। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য কোনো সদস্য নতুন কমিটিতে আসতে পারেন, এমন আলোচনা এবারও আছে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী কিংবা তরুণ নেতাদের সংখ্যা বাড়তে পারে, এমন কথাও বলছেন নেতাদের কেউ কেউ।
এ ছাড়া যাঁরা মন্ত্রিসভায় আছেন, তাঁদের বেশির ভাগকে দলীয় পদে না রাখার মতো ঘটনাও এবার দেখা যেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নতুন কমিটিতে কারা থাকবেন, কী পরিবর্তন হতে যাচ্ছে—এসব বিষয়ে স্পষ্ট করে কাউকে কিছু জানাননি ফলে জল্পনাকল্পনার ডালপালা বাড়ছে বলে মনে করেন একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্তর তিনটি। প্রথমত সভাপতিমণ্ডলী, দ্বিতীয়ত সম্পাদকমণ্ডলী, তৃতীয়ত নির্বাহী সদস্যরা। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য ৮১। এর মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলী ১৯ সদস্যের। সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ চারজন সদস্য মারা গেছেন। তাঁদের শূন্য স্থানে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী সম্মেলনে দু-একটা সংযোজন-বিয়োজন আসতে পারে।
সম্পাদকমণ্ডলীর প্রধান হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে ঘিরেই মূলত দলের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সভাপতির পর সাধারণ সম্পাদকই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এরপর দলের নেতাদের আকর্ষণ যুগ্ম সম্পাদকের চারটি এবং আটটি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ নিয়ে।
ওবায়দুল কাদের ছাড়া সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবিদার হিসেবে আরও বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্যাহও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আবদুর রহমানকেও কেউ কেউ এই পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী মনে করছেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের প্রায় সবাই সাধারণ সম্পাদকের দাবিদার। এর মধ্যে মাহবুব উল আলম হানিফ ২০০৮ সাল থেকে দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে—এই জন্যই দীর্ঘদিন একই পদে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অনুসারী–শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নামও আলোচনায় আছে। তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীতে যুক্ত হতে পারেন, এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার।