৩৬ বছর অপেক্ষায় থাকা আর্জেন্টাইনদের স্বপ্ন সত্যি করেছেন যে নায়কেরা, তাঁদের বরণ করে নিতে হলে আগে তো জানতে হবে কখন দেশের মাটিতে পা রাখবেন তাঁরা। ফ্লাইটরাডার ২৪-এর ওয়েবসাইটে ঢুকে গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায়ও দেখা গেল হাজার আষ্টেক লোক একসঙ্গে ‘ফ্লাইট এআর ১৯১৫’ ট্র্যাক করছেন। কী অধীর অপেক্ষা, বুঝতে পারছেন তো।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় আর্জেন্টাইনরা সবচেয়ে বেশি কোন ফ্লাইটের খোঁজ নিয়েছেন? উত্তরটা আপনি হয়তো না-ও জানতে পারেন, তবে অনুমান করা কঠিন কিছু না। সেটাও না পারলে গুগলের সাহায্য নিন, জেনে যাবেন—সে ফ্লাইটটি অ্যারোলাইনাস আর্জেন্টিনাসের এআর ১৯১৫।
দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যে উড়ানের চূড়ান্ত গন্তব্য বুয়েনস এইরেসের এজেইজা বিমানবন্দরে। আজ এই উড়ানেই দেশে ফিরছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দল, বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ফিরছেন লিওনেল মেসি।
কীভাবে বরণ করা হবে মেসিদের, সেই পরিকল্পনার কথা অবশ্য গতকাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি আর্জেন্টিনার কোনো সংবাদমাধ্যমই। তবে বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে করে বুয়েনস এইরেসের প্লাজা দে মায়ো স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে মেসিদের, সেখানেই বিশ্বজয়ী নায়কদের নিয়ে হবে মূল উৎসব, এমন জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দৈনিক।
আর্জেন্টাইন পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মেসিদের বহন করা বিমানটা বুয়েনস এইরেসের স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলের দিকেই নেমে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বজয়ের পর লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা দলের কয়েক ঘণ্টা উদ্যাপন, তারপর ছাদখোলা বাসে করে স্টেডিয়াম থেকে বেজক্যাম্প কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, সেখানে ভোর পর্যন্ত পার্টি শেষে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে মেসিরা যখন দেশে ফেরার বিমান ধরেছেন, তার অনেক আগেই ফ্লাইট ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেছে।
যাত্রাই যেহেতু অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে, পৌঁছাতে দেরি হবে স্বাভাবিক। ক্লারিন, ওলেসহ আর্জেন্টিনার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণ জানাচ্ছে, রোমে দেড় ঘণ্টার যাত্রাবিরতি শেষে মেসিরা বুয়েনস এইরেসে পৌঁছানোর কথা স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যার দিকে।
মেসিদের উদ্যাপন অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল রোববার রাতে লুসাইলের গঞ্জালো মন্তিয়েলের নেওয়া টাইব্রেকার শটটার পরেই। ওই শটেই নিশ্চিত হয়ে যায় আর্জেন্টিনার জয়, আর তার পর থেকেই লুসাইল স্টেডিয়াম আকাশি-নীলময়। পরিবার নিয়ে তাৎক্ষণিক উদ্যাপন, পুরস্কার গ্রহণ, ট্রফি নিয়ে ছবি তোলা পর্ব শেষে ড্রেসিংরুমেও এক দফা নেচেগেয়ে উদ্যাপন করেছেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে সেই উদ্যাপনে মেসি, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আর লাওতারো মার্তিনেজকেই বেশি উল্লাস করতে দেখা গেছে। কেউ টেবিলের ওপর উঠে নাচছেন, কেউ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন, আবার দল বেঁধে কোরাস ধরেছেন কখনো কখনো।
টাইব্রেকারের নায়ক গোলরক্ষক মার্তিনেজ তো সবাইকে নিয়ে নাচতে নাচতেই হঠাৎ থেমে গিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য! ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও যে এমবাপ্পে ফ্রান্সকে জেতাতে পারলেন না, সে জন্যই তাঁর জন্য ওই কপট ‘শোক’ মেসিদের।
বেজক্যাম্পে ফিরেও মেসিরা ভোররাত পর্যন্ত উদ্যাপন করেছেন নিজেদের মতো। টিম ডিনার শেষে আরও এক দফা চলেছে নাচ-গান, আড্ডা। তাতেই ফ্লাইটে দেরি। হলোই বা। এমন রাতে দেরিতে কী আসে যায়!
দোহা অবশ্য ফাইনালের আগেই এক টুকরা বুয়েনস এইরেস হয়ে উঠেছিল। আর্জেন্টিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যেন আরও বেশি। লুসাইল থেকে ছাদখোলা বাসে করে মেসিরা কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের বেজক্যাম্পে যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা গর্জন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ঢাকঢোল ও আতশবাজিতে চলে আর্জেন্টিনার বিজয় মিছিল।