জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য গতকাল শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে তাঁরা এ ঘোষণা দেন।রাতে বিএনপি সূত্র জানায়, আজ রোববার সকালে বিএনপির সংসদ সদস্যরা সশরীর স্পিকারের কাছে গিয়ে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
গণসমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র-গণবিরোধী কার্যকলাপে বাক্স্বাধীনতা, বিরোধী দলের ওপর দমন–পীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি।’
উল্লেখ্য, বিএনপি গতকাল ১০ দফা দাবি তুলে ধরে। তার মধ্যে ছিল জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ ও দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসহ ৩৫০টি আসনের মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্য রয়েছেন সাতজন। তাঁরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া–৬ আসনের জি এম সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা। এই সংসদের মেয়াদ এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল তিনি সাভারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় বলেন, এই ভুলের জন্য বিএনপিকে অনুতাপ করতে হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।
জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ সংসদে আছে। বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য চলে গেলে সংসদ অচল হয়ে পড়বে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘সংসদে বিএনপির দুজন (সংসদ সদস্য) আছেন। একজন মহিলা ও একজন পুরুষ, তাঁদের চিৎকারে সংসদে মাইক লাগে না।’
বিএনপির গণসমাবেশে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘যখন আমি সাধারণ মানুষের কথা বলতে চেয়েছি, গণমানুষের কথা বলতে চেয়েছি, আমাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সংসদে থাকা আর না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।এ কারণে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারের গুম, খুন বিচারবহির্ভূত হত্যা, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, প্রকাশ্য লুটপাট—সবকিছুর প্রতিবাদে আজকে আমি সংসদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বিএনপির গণসমাবেশে সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ প্রথম বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর দলের অন্য সংসদ সদস্যরা একে একে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান। বিদেশে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের পক্ষে তাঁর পদত্যাগের কথা জানান জি এম সিরাজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দলটির সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। বগুড়া–৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি পাঁচজন তখন শপথ নেন।
নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় মির্জা ফখরুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সেখানে নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জি এম সিরাজ।