এক্সক্লুসিভজাতীয়ঢাকাবাংলাদেশবিএনপিরাজধানীরাজনীতি

বিএনপির দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনের জন্য ১০টি সুনির্দিষ্ট দাবি

নানা অঘটন ও নাটকীয়তার পর অবশেষে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশে জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনের জন্য ১০টি সুনির্দিষ্ট দাবি এবং এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগপৎ কর্মসূচির এই ঘোষণা দেন। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শেষ হয়। গোলাপবাগ মাঠের এই সমাবেশ ঘিরে গতকাল রাজধানীর উত্তর-পূর্ব প্রান্তের এলাকাটি ছিল সরগরম।

ঘোষণা অনুযায়ী, ১০ দফা দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে ‘গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ফলে এত দিন বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি এককভাবে পালন করে এলেও ওই দিন গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা হবে।

ঢাকার এই গণসমাবেশ নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে বেশ উত্তপ্ত ছিল রাজনীতির অঙ্গন। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যে গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতা নিহতসহ অনেকে আহত হওয়া, দলীয় কার্যালয়ে অভিযান, সর্বশেষ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার এই গণসমাবেশ ঘিরে এমন নানা অঘটনের পর শেষ মুহূর্তে বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

জনাকীর্ণ এই সমাবেশে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের আগে ১৩ ডিসেম্বর সব মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হয়। গত বুধবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং চলমান কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

অনুমতি পাওয়ার পর টানটান উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার রাতেই সমাবেশস্থলে পৌঁছে যান বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী। অনেকে সেখানেই রাত কাটান। ক্ষমতাসীন দল এই সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় মহড়া, সতর্ক পাহারা বসানোর ঘটনায় নানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। অবশেষে অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে বড় জমায়েত করল বিএনপি।

গত দুই মাসে নয়টি বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলে আসছিলেন, ঢাকার সমাবেশ থেকে তাঁদের আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলের নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি গত ১২ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে গণসমাবেশ করছে। সর্বশেষ গতকাল ঢাকার সমাবেশে দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনের ঘোষণা এল।

সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের সমাবেশ থেকে জনগণের বার্তা হচ্ছে, যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, তাদের দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। যারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, তারা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। যারা আইন বিভাগকে ধ্বংস করেছে, আইন বিভাগকে নিরপেক্ষ করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যারা ব্যবহার করে অনৈতিকতার দিকে নিয়ে গেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নয়টি বিভাগীয় সমাবেশে জনগণ রায় দিয়েছে, তারা এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই সরকারের অনতিবিলম্বে বিদায় চায় দেশের জনগণ। তাই আজকে গায়ের জোরের সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব পদত্যাগ করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঘোষিত ১০ দফাকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে এ দেশের জনগণকে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ১০টি দফা প্রণয়ন করেছি। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, এ বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মতি নিয়েছি।’

Back to top button