গুলশানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ২৮ রাষ্ট্রদূতের একটি বৈঠক হয়েছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে অন্তহীন কৌতূহল। কী আলোচনা হয়েছে সেখানে? ১০ই ডিসেম্বরকে ঘিরে ঢাকার রাজপথে যখন নতুন করে রক্ত ঝড়েছে তখন কূটনৈতিক পল্লীর এমন বৈঠক রাজনীতি সচেতনদের বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বৈঠক সংশ্লিষ্টরা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, কূটনৈতিক জোনের বৈঠকটি ছিল পূর্ব নির্ধারিত। ৩ জন রাষ্ট্রদূতকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাতে কূটনৈতিক কোরের ডিন হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মরক্কোর রাষ্ট্রদূত এটি আয়োজন করেছিলেন। চীন, জাপান ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ের আয়োজন ছিল এটি। তবে সেখানে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ছিলেন অনুপস্থিত!
কূটনৈতিক কোরের ডিন ও ঢাকায় দীর্ঘ সময় ধরে কর্মরত মরক্কোর রাষ্ট্রদূত মাজিদ হালিমের বাসার বৈকালিক ওই হাই-টি পার্টি বা চা-চক্রে নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণব ভার্মা, জাপানের রাষ্ট্রদূত (বিদায়ী) ইতো নাওকি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত (বিদায়ী) মুস্তাফা ওসমান তুরান, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রায়ার।
নরওয়েরে রাষ্ট্রদূত ইসপেন রিখটার সেভেনডেসন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মাসদুপে, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নান জিয়াটা, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ড্রা ব্রেগ ভন লিন্ডে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ ই আল দুহাইলান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আল হামোদি, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান, কসোভোর রাষ্ট্রদূত গানার উরায়া।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘন শ্যাম ভান্ডারি, ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুনশালি, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত পেহম ভিয়েত চেইন, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পাক সং ইউপ, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জায় কুন, রাষ্ট্রদূত মানসোলর চেভোসি, ইরাকের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্দুস সালাম, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সামির, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হারটেন্তো সুবোলো, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ম্যাকোদি সুমতমোর, ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত মারিনকো অ্যান্তোলোভিক, লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালিব এসএম সুলায়মান, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজনাহ বিন্তি মোহাম্মাদ হাশিম, ও সিঙ্গাপুরের কনসাল শিলা পিল্লাই কুলাহ অংশ নেন।
সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ঢাকার কূটনৈতিক পল্লীতে রাষ্ট্রদূতদের এমন জমায়েত সম্ভবত এটিই ছিল প্রথম। তাছাড়া জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের পার্টি ছিল এটি। যেখানে সঙ্গতকারণেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতরা তাদের অবজারভেশন দিয়েছেন।
যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অন্য দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতের আলোচনায় কূটনৈতিক কোরের ডিন তুলে ধরতে পারেন। উল্লেখ্য, ওই আয়োজনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আলোচিত অনেক রাষ্ট্রদূত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্মরণ করা যায়, ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন, নরওয়ে এবং ডাচ্ দূতাবাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে দূতাবাসের প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়ন উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মৌলিক ভূমিকাকে তুলে ধরতে চাই। আমরা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে সংরক্ষিত স্বাধীনতা উদ্যাপন করি এবং ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্যে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরি। অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি।
রাষ্ট্র ও জোট মিলে পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ঢাকার ১৫ মিশনের ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি জোর সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। বহুল আলোচিত ওই বিবৃতিতে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার তাগিদ দেয়া হয়।