রাজধানীতে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে—এ কথা বলে কর্মীদের চাঙ্গা করছেন নেতারা। মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিটগুলোতে চলছে উঠান বৈঠক। বিএনপির সমাবেশের আগে ও পরে বড় ধরনের শক্তি প্রদর্শনের কর্মসূচি নিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
বিএনপির সমাবেশের আগের দিন ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় শান্তি মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উভয় শাখা। ওই দিন রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ ডেকেছে মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ। বিএনপির সমাবেশের দুই দিন পর ১৩ ডিসেম্বর পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে জনসভা আহ্বান করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর।
এতে দেখা যায়, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের কাছে ৮ ডিসেম্বর থেকে মাঠে থাকার নির্দেশ পৌঁছে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা, এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
তবে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না। মহানগরে মিছিল সমাবেশ হবে মৌখিক নির্দেশে এবং সংগঠনের স্থানীয় শাখা ও মহানগর কমিটির উদ্যোগে। কর্মসূচি পালন করা হবে দলীয় নানা ইস্যু নিয়ে।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনেই সমাবেশে অনড় থাকার মধ্য দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি ও নাশকতার বিষয়ে তাদের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছে। সে কারণে বিএনপির এই সমাবেশের উদ্দেশ্যকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে নাশকতা রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সহযোগিতা করা দায়িত্ব বলে নেতাকর্মীদের রাজপথে সজাগ অবস্থানে থাকার কথা বলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেছেন, তাঁদের ওপর নির্দেশ এসেছে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান নেওয়ার। পরিস্থিতি বুঝে তাঁরা আগের রাত থেকেও অবস্থান নিতে পারেন।
ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সদ্যোবিদায়ি সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘নেতারা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানে আমরা ৮ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন অবস্থান করব, বিজয়ের মাস উদযাপন করব। কেউ নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে প্রতিহত করব। ’
ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ বলেন, ‘কেউ যাতে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য আমরা ৮ ডিসেম্বর থেকেই রাজপথে থাকব, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তি মিছিল করব। ’
বিএনপি আগের দিন এসে নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে পারে—এমন ভাবনা থেকে ৯ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ শাখা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জনসভা আহ্বান করেছে। স্থানটি নয়াপল্টনের কাছাছাকাছি, সাধারণত এই স্থানে আওয়ামী লীগ কখনো জনসভা করে না। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আওয়ামী লীগের জনসভাকে অনেকেই ইঙ্গিতপূর্ণ মনে করছেন।
যদিও এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আমরা শান্তির জন্য সমাবেশ করব, কাছেই বিএনপি অফিস কি না বা তাদের সমাবেশস্থল কি না, এটা ভেবে আমরা সমাবেশ ডাকিনি। ’ আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রাজধানীর সীমানা ছাড়িয়ে সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
ওই সব জেলার নেতাদেরও অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খান বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে যোগদানের কথা বলে কেউ যদি নাশকতা সৃষ্টি করতে আমাদের ওপর দিয়ে যায়, তা হলে আমাদের শান্তিকামী মানুষ নিশ্চয়ই তা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, ১৩ ডিসেম্বরে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠের জনসভা আমাদের কর্মসূচির অংশ। দেখুন, আওয়ামী লীগ একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, দলের নেতাকর্মীরাও দায়িত্বশীল। বিএনপি কোনো অরাজকতা করার চেষ্টা করলে আমাদের কর্মীরা নিজেদের দায়িত্বে যে কয় দিন প্রয়োজন, মাঠে থাকবে। যেখানে প্রয়োজন অবস্থান করবে। ’
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি একটি কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে, অতীতে তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের সে স্বভাব রয়েছে—এমন একটা আশঙ্কা মানুষের মাঝে থাকা স্বাভাবিক। তবে এবার তেমন করার চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষই তাদের জবাব দেবে। আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তি মিছিল, শান্তি সমাবেশ করবে। ’