ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের টিএসসি অভিমুখী সড়কে এক নারী তাঁর গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান। তবে চালক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। পথচারীরা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
গাড়ির নিচে আটকে থাকা নারীকে নিয়েই টিএসসি থেকে বেপরোয়া গতিতে নীলক্ষেতের দিকে যান চালক। পেছনে পথচারীরা তাঁকে তাড়া করেন। পরে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে পলাশী অভিমুখী সড়কের মুখে চালককে আটকে ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা চালককে দেওয়া হয় গণপিটুনি।আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দুজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই নারীর মৃত্যু হয়। আর চালকের চিকিৎসা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাড়ির নিচে আটকে যাওয়া নারীকে টেনে নেওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষক। তাঁর নাম মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে চারুকলা অনুষদের সামনে জাফর শাহের প্রাইভেট কারের ধাক্কায় সামনের মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান ওই নারী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ওই নারী প্রাইভেট কারের বাম্পারে আটকে যান। তখন গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে যান চালক। তাঁকে ধাওয়া করে নীলক্ষেত মোড়ের কাছে ধরে ফেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত নারীর নাম রুবিনা আক্তার (৪৫)। তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তেজকুনিপাড়ায় থাকতেন। তাঁর স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন। তাঁদের এক সন্তান রয়েছে। আর গাড়ির চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে রুবিনার ভাই জাকির হোসেন জানান, রুবিনা তাঁর দেবরের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে হাজারীবাগে তাঁর (রুবিনা) বাসায় যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলটিকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে রুবিনা গাড়ির সামনে পড়ে যায়। আর তাঁর দেবর নুরুল আমিনও পাশে পড়ে যায়। পরে গাড়িটি রুবিনাকে হিঁচড়ে নিয়ে দ্রুতি টানতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ওই নারী প্রাইভেট কারের বাম্পারে আটকে যান। তখন গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে যান চালক। তাঁকে ধাওয়া করে নীলক্ষেত মোড়ের কাছে ধরে ফেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পঞ্চাশোর্ধ্ব জাফর শাহ। তাঁর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ক্লাসসহ একাডেমিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ২০১৮ সালে আজহার জাফর শাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
দুর্ঘটনার খবর শুনে রুবিনার স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসেন। তাঁরা জানান, রুবিনার স্বামী ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে মারা যান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া একমাত্র ছেলে রোহানকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের হোন্ডা গলিতে বসবাস করতেন রুবিনা। ওই বাসা থেকেই দেবর নুরুল আমিনকে নিয়ে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। রুবিনা একজন গৃহিণী। স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়িভাড়া ও স্বজনদের সহযোগিতায় ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো.শহিদুল্লাহ বলেন, জাফর শাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তাঁর কথা বলার মতো অবস্থা নেই। তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। একটি মোবাইল নম্বর ছিল। সেটাও এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।জাফর শাহ কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ বলেন, তিনি কেন এমনটি করলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।