পুলিশি বাধার মুখে রাজশাহী সমাবেশে পায়ে হেটে নেতাকর্মীদের যোগদান
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামী শনিবার। সমাবেশের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই রাজশাহীতে ছুটছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে পথে পথে পড়তে হয়েছে পুলিশের বাধার মুখে।
জানা গেছে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকাল বুধবার বিকেল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে জড়ো হতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাত থেকে ঢল নামে নেতাকর্মীদের।বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা থেকে এরই মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজশাহী পৌঁছে গেছেন। কেবল পুরুষরাই নন, এসেছেন নারী নেতাকর্মীরাও।
বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও। জেলা ও উপজেলাভিত্তিক তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান করছেন তারা। বিকেলের মধ্যেই তাঁবুতে ঢাকা পড়ে গোটা মাঠ। সন্ধ্যায় ঈদগাহ মাঠ ছাড়িয়ে পাশের সড়কে ঠাঁই নেন তারা।
তাঁবুর ভেতরে কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন, আবার কেউ রান্না করছেন।এই তিন দিন কী খাবেন, জানতে চাইলে সমাবেশে আসা বৃদ্ধ মোতালেব বলেন, ‘পেলে খাবো, না পেলে খাবো না। তবুও সরকারকে হটাতে চাই।’
গত বুধবার দুপুরে ঈদগাহ মাঠে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে এসেছেন নওগাঁ সদরের তিলকপুর ইউপি বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা (৬০)। তিনি বলেন, ‘চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারে আগুন। হু হু করে দাম বাড়ছে। আমরা গরীব মানুষ। টাকা নেই। খাবো কী? কতদিন এভাবে আর চলবে? তাই সরকারের পতন ছাড়া ঘরে ফিরব না। মরতে হলে মরব! এ জন্য কাফনের কাপড় পরে এসেছি।’
মাঠে গিয়ে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা কাপড়ের তাঁবু বানিয়ে মাঠে খড়ের ওপর জটলা করে শুয়ে রয়েছেন। অদূরেই বাঁধের ওপারে নদীর বালুর ওপর তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে সারি সারি অস্থায়ী শৌচাগার।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি নেতা শফিকুল জানান, খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি ও পানি মজুদ রয়েছে। অনেকেই চাল, ডাল, সবজি, তেল একসঙ্গে বেঁধে নিয়ে এসেছেন। মাঠের বিভিন্ন স্থানে শুয়ে থাকা জটলার পাশে অস্থায়ী চুলায় রান্না ওঠানো হয়েছে।
এদিকে বাইরে থেকে এসে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যাতে ছাত্রাবাসগুলো আশ্রয় নিতে না পারে, সেজন্য ‘জরুরি নোটিশ’ জারি করেছে রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতি। নোটিশে বলা হয়, ‘আইনশৃংখলা বাহিনীর নির্দেশে নাশকতা বা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য পয়লা ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহিরাগত কোনো অতিথিকে ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাসে অবস্থান না করানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।’
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এএসএম ওমর শরিফ রাজিব ও যুগ্ম সম্পাদক কায়সান আহমেদের স্বাক্ষর রয়েছে ওই নোটিশে।
পুলিশের দেওয়া শর্তের বেড়াজালে আটকে গেছে মাঠের সাজসজ্জার কাজ। রাত-দিন মাঠ পাহারা দিচ্ছে পুলিশ।মাঠ সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব বিপ্লব মাহমুদ জানান, সমাবেশের দিন সকালের আগে মাঠে প্রবেশ করতে দেবে না পুলিশ। এ কারণে মাঠের কাজ শেষ করা যায়নি।
গতকাল বিকেলে মাঠ পরিদর্শন করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জানিয়েছেন, তারা পুলিশের দেওয়া শর্ত মেনেই গণসমাবেশ করতে চান। এ জন্য কোনো ধরনের বিশৃংখলা না করতে নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।