আইন-আদালতএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশব্যাংকিংরাজধানী

৪০ বছর মামলার ঘানি টেনে ৯০ বছর বয়সে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু

৫২ বছর বয়সে আসামি হয়ে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত মামলার ঘানি টানা ব্যাংক কর্মকর্তা আরব আলী মারা গেছেন। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন তিনি। আর একই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগমও। ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ সৈয়দ কামাল হোসেন বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে বার্ধক্যজনিত রোগে আরব আলী মারা যান। পরে আদালত তাঁর মৃত্যুর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলেন। সম্প্রতি আদালতে সেই প্রতিবেদন জমা পড়েছে। এরপর আসামির তালিকা থেকে আরব আলীর নাম কেটে দেওয়া হয়। তবে একই মামলায় তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম আসামি ছিলেন। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালতের দেওয়া রায়ে মনোয়ারা খালাস পেয়েছেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন আরব আলী। ওই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১৯৮২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় ৪০ বছর ধরে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করেন তিনি।

আরব আলী ও তাঁর স্ত্রীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, আরব আলী ও স্ত্রী মামলা থেকে মুক্ত হলেন। তবে আরব আলী তাঁর জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পারলেন না।৯০ বছর বয়সী আরব আলীর মামলা নিয়ে গত ১৪ জুন গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতির নজরে আসে। এরপর প্রধান বিচারপতি সারা দেশের আদালতে পুরোনো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেন বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছিলেন।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ আরব আলী রাজধানীর নয়াপল্টনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ৯০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারতেন না। এই মামলার বাদী ছাড়াও পাঁচ আসামির তিনজনই মারা গেছেন। মৃত তিন আসামির মধ্যে জাহানারা বেগম আরব আলীর স্ত্রী ছিলেন।

দুই বছর আগে মামলার বিচারে নতুন করে অভিযোগ গঠিত হয়, সেখানে আসামি ছিলেন শুধু আরব আলী ও তাঁর জীবিত স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।নয়াপল্টনে আরব আলীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি অসুস্থ। হাতে ক্যানুলা। ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। আরব আলী সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ। মামলার বিষয়ে আমার কিছু মনে নেই।’

দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আরব আলীকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ মামলার বিচারকাজ গতি পায়। মামলার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪০ বছরের পুরোনো এ মামলায় পাঁচজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর রেজাউল করিম বলেন, এ মামলার সাক্ষীদের অনেকে মারা গেছেন। তারপরও যে কয়জন বেঁচেছিলেন, তাঁরাও সবাই একেবারে বৃদ্ধ।

Back to top button