শেখ হাসিনার অধীনে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপিমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি’র পরিস্কার কথা, হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, এবং নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।শনিবার (০৫ নভেম্বর) বিকালে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বর্গির রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে।
তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরি ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।বিএনপির এ নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।
শনিবার নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গুলিতে নেতাকর্মী হত্যা, হামলা ও মামলার লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় মহাসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস, লঞ্চ, ছোট যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় কার্যত সারা দেশ থেকে বরিশাল ছিল বিচ্ছিন্ন। শনিবার সকাল থেকে বরিশালের মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছিল ধীর গতির, কখনো কখনো সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতির মধ্যে মাছ ধরার ট্রলার, পণ্যবাহী নৌযান, সাইকেল এমনকি হেঁটে বিভাগের জেলা ও উপজেলা থেকে অসংখ্য নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করার আশঙ্কায় গত বুধবার থেকেই এই সমাবেশে দূর-দূরান্তের লোকজন সমাবেশস্থলে আসেন। সেখানে তিন দিন ধরে ছিলেন তাঁরা। এরপর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বাড়তে থাকে উপস্থিতি।বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার দুর্নীতি করেনি এমন একটা জায়গা দেখান। একটা চাকরিও কি তারা দিয়েছে? দিয়েছে, তবে সেটি আওয়ামী লীগের ছেলেদের।
২০ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছে। বিনা পয়সার সার দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে তিনগুণ দেশি দামের সার দিচ্ছেন।তিনি আরো বলেন, সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়।
এ সময় খালেদা জিয়া বরিশালকে বিভাগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।গণসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দীন আহেমদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ।