এবার টাকা দিয়ে ভাইরাল চুয়াডাঙ্গার সামশাদ রানু

গত ১৮ই অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদে হেরে রফিকুল ইসলাম ওরফে সংগ্রাম নামের নেতা জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে ভাইরাল হয়েছেন। এর রেশ না কাটতেই এবার চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা নিয়েও ভোটাররা ভোট দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সামশাদ রানু নামে আরেক নারী প্রার্থী।

তিনি ভোটারদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি ফেসবুকে পোস্ট করলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভোটাররা।সামশাদ রানুর ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো- ‌

‘আমি সামসাদ রানু রাঙ্গাভাবী ২৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের নগদ (১০) দশ হাজার করে টাকা দিয়েছি নির্বাচনের জন্য। টাকা আমি দিতে চাইনি কিন্তু অবশেষে বাধ্য হয়েছিলাম। কারণ সবাই মাঠে টাকা দিয়েছে। এই চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কত নিকৃষ্টমনের মানুষ, কত নিচ মনের মানুষ, কতটা বেঈমান, কতটা নোংরা হলে এরা সবার কাছ থেকে টাকা নিতে পারে। এরা কিনা সমাজের প্রতিনিধি। যাদের কোনো বিবেক নেই। এরা সমাজের কিট। এরা কীভাবে সমাজের ন্যায়- অন্যায় বিচার করবে? এরা তো নিজেরাই অপরাধী তাই না?হে সমাজের মানুষ তোমরা সচেতন হও সমাজের প্রতিনিধি যাদের তৈরি করবে তাদের বংশ দেখ, ভালো-মন্দ বিচার করো, তারপর ভোট দাও। আজ যারা সমাজের প্রতিনিধি তারা সমাজের বড় বড় ভিক্ষুক, যাদের ঝুঁড়িতে কোনো কিছু নাই, তারা তোমাদের কী দেবে ভোট দিলে? এসব প্রতিনিধি সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ভিক্ষুক! এরা কতটা নিচ মনের মানুষ যে সব প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে। দশ হাজার, পঞ্চাশ হাজার ও এক লাখ টাকা করে অথচ ভোট দেওয়ার অধিকার একটি করে। তিনজনকে দেবে তিনটা ভোট কিন্তু টাকা নিয়েছে সব প্রার্থীর কাছ থেকে। হায়রে সমাজের প্রতিনিধি, তোরা বঞ্চিত করলি সমাজের সবচেয়ে সৎ ও ভালো মানুষটিকে!

এদিকে টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়াসহ ভোট পরবর্তী টাকা উদ্ধারের এই কৌশল জেলাজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।এছাড়া পরাজিত প্রার্থী ভোট পরবর্তী টাকা উদ্ধারে জনমনে আলোড়ন তুলেছেন। তবে ভোট বাণিজ্যের এ বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।জানা গেছে, সদ্য অনুষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে ১ নম্বর ওয়ার্ডে (চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা) হরিণ প্রতীকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন জেলা কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা সামশাদ রানু। মাত্র ৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হন তিনি।সামশাদ রানু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের মাঠে অন্যান্য প্রার্থীরা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের টাকা দিয়েছে। আমি টাকা দিতে চাইনি, কিন্তু অবশেষে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছিলাম।

আমার নির্বাচনী এলাকা চুয়াডাঙ্গা সদর-আলমডাঙ্গা উপজেলার মোট ২৩ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার দুই পৌরসভার ভোটার, সদর উপজেলার চেয়ারম্যানকেও টাকা দিয়েছি। প্রতিশ্রুতি দিলেও কিন্তু তারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। টাকা নিলো কিন্তু ভোট দিলো না। সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে আমার টাকা ফেরত চাই।এ বিষয়ে কথা হয় আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া, খাদিমপুর, হারদি, বাড়াদি, বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের। তারা প্রত্যেকেই বলেন, ওই নারী প্রার্থীর থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছি। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে প্রার্থীরা অনেক কিছুই বলে থাকেন। এসব কথা ভিত্তিহীন।চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান কবির বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। সামশাদ রানু ভোটারদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি তার ফেসবুক পোস্ট দেওয়ায় সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলোচনা সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ফেসবুক তো অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগের স্থান না।

তিনি নিজেই টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তাহলে তিনিই প্রথম অপরাধ করেছেন। আমাদের কাছে যদি কেউ অফিসিয়ালি অভিযোগ দেন, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আবার ওই প্রার্থীর কথা সত্য নাকি মিথ্যা, পরাজিত হয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Exit mobile version