বিএনপিরাজনীতি

চলছে বিএনপিতে আসনের জন্য দরকষাকষি

বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এছাড়া বিএনপি এটাও বলছে যে, আগে সরকারের পতন হতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তারপর নতুন নির্বাচন হবে। তবে, মুখে বিএনপি এই অনড় অবস্থানের কথা বললেও বাস্তবতায় চেহারা ভিন্ন।

প্রতিদিনই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মহলের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের আগে একটি সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করা এবং কিছু কিছু বিষয়ে ছাড় দেয়ার বিষয়টি যেমন সমালোচনা হচ্ছে তেমনি বিএনপি ১০০ আসনের নিশ্চয়তা চাইছে। কূটনৈতিক পাড়ায় এখন নিয়মিত রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা শুরু হচ্ছে এবং সেখানেই বিএনপির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মহলের অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হচ্ছে।

এই সমস্ত কথাবার্তাগুলোতে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ আসছে, আসছে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ। নির্বাচনের আগে মুখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচন করবেন না এমন কথা বললেও বাস্তবে বিএনপি আসলে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছে। বরং তারা মনে করছে আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু কিছু বিষয়ে তারা অর্জন করতে চায়। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে যে বিষয়গুলো অর্জন করতে চায় তার মধ্যে রয়েছে-

১. নির্বাচনকালীন সরকার: বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, নির্বাচনের আগে সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাও করে তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার করতে চায়। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ যে প্রস্তাব দিয়েছিল সেই প্রস্তাবটিকে নিয়েই নতুন করে আলোচনা হতে পারে বলে বিএনপি নেতারা দেনদরবার করছেন। তারা চাচ্ছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হোক, একটা মুখরক্ষার ব্যবস্থা যেন করা হয় যাতে তারা নির্বাচনে যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনের গ্যারান্টি চাইছে। একদিকে যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন, অন্যদিকে ১০০ আসনের গ্যারান্টি। এরমধ্যে বিএনপি আসলে কোনটা চায়, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রশ্ন উঠছে। কারণ, যদি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে কেউ আসনের গ্যারান্টি দিতে পারেনা। তাহলে বিএনপি আসনের গ্যারান্টি কিভাবে চাইছে, এই প্রশ্ন সরকারের অনেক নীতিনির্ধারকদেরও।

২. দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার: এই ইস্যুটি বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও করেছিল। তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, বিএনপির কারা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন তাদের তালিকা দেওয়া হোক, তাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, এরকম মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, যে সমস্ত মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় বলা হচ্ছে তা আসলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, তা স্বাভাবিক অপরাধমূলক মামলা। এমনকি খুনের মামলাকেও রাজনৈতিক মামলা হিসেবে বিএনপি তুলে ধরেছে। কিন্তু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। স্বাভাবিক অপরাধের জন্য বিচার হতেই হবে, তা তিনি যেকোনো দলের হোন না কেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ক্ষমতাসীন দলের কেউ যদি অপরাধ করে তবে তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কাজেই এই অবস্থান থেকে সরকার সরে আসতে রাজি নয়। তবে নির্বাচনের আগে কিছু কিছু মামলা যেমন- রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালের মামলা থেকে অন্য অন্যান্য মামলাগুলোর ব্যাপারে সরকার কিছুটা নমনীয় হলেও হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

৩. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি: বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আসলে বিএনপির প্রধান লক্ষ। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে একটি চাপ সৃষ্টি করতে চায় সরকার যাতে সরকার তাদের কিছু দাবি মানতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছেন। তারা মনে করছে যে, যদি বিএনপি মাঠ গরম করতে পারে তখন সরকার বিএনপির সঙ্গে একটি সমঝোতা করবে এবং এই সমঝোতার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে পারেন।

Back to top button