মোশাররফ-ফখরুলের দ্বন্দ্বে কি নিয়ে?

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে মিলিত হচ্ছে। এই সংলাপের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিএনপি মহাসচিব বলছেন যে, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা। কিন্তু এই বৈঠকগুলোতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একমাত্র সঙ্গী হলেন নজরুল ইসলাম খান।

আর অন্যকিছু ছোটখাটো নেতা তার সঙ্গী-সাথী হয়ে এই আলোচনাগুলো অংশ নিচ্ছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে নেই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যেমন- মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কিছু কিছু অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু একেবারেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে তিনি পারতপক্ষে যাচ্ছেন না। শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে নয়, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তারেক জিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করছে না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে। বিএনপির অন্যতম সাবেক নেতা কর্নেল অলি আহমেদের বাসায় সম্প্রতি বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গিয়েছিলেন রাজনৈতিক সংলাপ করার জন্য।কিন্তু এই অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন এবং সেখানে তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান।

বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি অনুষ্ঠান করবে। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রাখতে চাইলেন বিএনপির স্থায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।যথারীতি সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ড. মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন, তাঁর বাসায় গেলেন। মোশাররফ জানতে চাইলেন, অনুষ্ঠানে কে কে থাকবেন। ওই সহযোগী সংগঠনের একজন বললেন যে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অনুষ্ঠানে থাকার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার অবস্থান পরিবর্তন করলেন।

তিনি বললেন, ওই অনুষ্ঠানে তিনি যেতে পারবেন না, তার অন্য ব্যস্ততা রয়েছে। এই ঘটনা একটি নয়, এরকম বহু ঘটনা এখন বিএনপি কর্মীদেরকে দেখতে হচ্ছে। যেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাচ্ছেন সেখানে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যাচ্ছেন না।খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে সেখানে বিএনপি মহাসচিব অনুপস্থিত থাকছেন।ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন বিএনপির জ্যেষ্ঠতম নেতা। তাকে অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই স্যার হিসেবে সম্বোধন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকার কারণে তাকে এই সম্মান দেখানো হয়। তাছাড়া দলের বিভিন্ন সংকটের সময়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

আর এ কারণেই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, বিএনপির এই সংকটে তারই নেতৃত্বে থাকা উচিত।ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনপন্থীরা বিশ্বাস করেন যে, তারেক জিয়া নয়, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যদি বিএনপির নেতৃত্বে থাকতেন তাহলেই বিএনপিকে এখন আরও বেশি শক্তিশালী করা হতো। এমনকি বিএনপিতে যদি খন্দকার মোশাররফ হোসেন কর্মসূচিগুলো নির্ধারণ করতেন, কৌশলগুলো নির্ধারণ করতেন তাহলেও বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতো এবং সরকারকে চাপে ফেলতে পারতো বলে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা মনে করেন।উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে দলের স্থায়ী কমিটিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

সমস্ত সিদ্ধান্ত লন্ডন থেকে আসে এবং তারেক জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেভাবে কাজ করেন। এই বাইরে দলে কারো কোনো কথা বলার এখতিয়ার নাই।সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এরকম একটি প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাহলে স্থায়ী কমিটি রাখার দরকার কি? দলের ন্যূনতম গঠনতন্ত্র যদি অনুসরণ না করা হয়, তাহলে দল চলবে কিভাবে? মূলত ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন মনে করেন যে, বিএনপিকে বাঁচাতে হলে তারেকের হাত থেকে বিএনপিকে মুক্ত করতে হবে। আর এ কারণেই তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন। কারণ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো জি হুজুর নেতৃত্ব বিএনপিকে কিছু দিতে পারবে না বলেই মোশাররফপন্থীরা মনে করেন।

Exit mobile version