বিএনপি এখন প্রতিনিয়ত কূটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ করছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে করা যায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কিভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায় এসব নিয়ে দফায় দফায় কূটনৈতিক পাড়ায় ধরনা দিচ্ছে বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
কিন্তু এসব ঘটনায় বিএনপি যেভাবে সমর্থন প্রত্যাশা করেছিল সেভাবে সমর্থন পাচ্ছে না।বরং কূটনীতিকরা বিএনপিকে নানা রকম শর্তের জালে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন যে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি আন্দোলন করবে এবং সরকারের পতন ঘটাবে। তার এই বক্তব্যটি প্রচাচিত হবার পরপর কূটনীতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্বে দল পরিচালিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে তারাই আমাদের ফিনিশার, তারাই আমাদের স্ট্রাইকার। এই সব বক্তব্য নিয়ে গত দুইদিন কূটনীতিকপাড়ায় বিএনপি নেতৃবৃন্দকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
বিশেষ করে একজন দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত ব্যক্তির নেতৃত্বে কিভাবে বিএনপি আন্দোলন করবে? এই প্রশ্নটি কূটনীতিকদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। তাদের বক্তব্য হলো যে দুর্নীতির দায় যখন একজন দণ্ডিত হয়েছেন তখন তার রাজনৈতিক করা উচিত না, অধিকার নেই। এটি কোনো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি হতে পারে না। এ বিবেচনায় তারা বিকল্প নেতৃত্বের জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে।একজন কূটনীতিক বলেছেন যে বিএনপি সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করছেন এবং অন্যদিকে তারাই দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে নেতৃত্বে রাখছেন। এটি স্ববিরোধী। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কিন্তু কূটনীতিকরা সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা মনে করছে নিম্ন আদালতে অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত এখনো নির্মোহ এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এটা জনগণের আস্থার জায়গা। কাজেই সর্বোচ্চ আদালত যখন খালেদা জিয়ার দণ্ড বহাল রেখেছে, তারেক জিয়ার দণ্ড বহাল রেখেছে তখন এ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা মানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের সামিল। বিচার বিভাগের ওপর অনাস্থা, গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার এবং রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। আর এই বাস্তবতায় বিএনপিকে এখন নেতৃত্ব পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিএনপি এই আহ্বানে সাড়া দেবে কিনা সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিএনপি নেতারা অবশ্য এ ধরনের প্রস্তাবগুলোকে অসম্মানজনক হিসেবে মনে করছে।
তারা বলছে যে বিএনপির নেতৃত্বে কে থাকবে তা কূটনীতিকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আর এর ফলে বিএনপির আন্দোলনে বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে কূটনৈতিক সহযোগিতা কতটুকু পাওয়া যাবে এ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আপাতত বিএনপির দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
কূটনীতিকরা বিএনপিকে বলছে যে, যারা দন্ডিত, যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে দিয়ে যদি বিএনপি আন্দোলন করতে চায় সেই আন্দোলনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদেরকে সমর্থন দেবে না। বরং এই সমস্ত নেতৃত্ব এই উপমহাদেশের ভারসাম্য, শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য হুমকি হিসেবে তারা মনে করেছেন।
ফলে বিএনপিকে সবার আগে বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজে বের করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ড. মঈন খান, আমির খসরু, মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুমিন ফারহানাসহ একাধিক বিএনপি নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের গত দুই দিনে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এই সমস্ত বৈঠকে বিএনপিকে আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।