জাসদবাংলাদেশরাজনীতি

বাম রাজনীতির কেনো এমন অবস্থা?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো। তারা না পারছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে, না পারছে বিএনপির মত সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনকে সমর্থন দিতে। আর এ কারণে ক্রমশ সংকুচিত এবং সংকটে পড়ছে দেশের বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।

দেড় দশক সময় ধরে বাম রাজনৈতিক দলগুলো বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা নামে একটি জোটের মাধ্যমে আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির একাংশসহ কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দল স্বাতন্ত্র অবস্থান থেকে আন্দোলন করার চেষ্টা করছে।কিন্তু এই আন্দোলনে তারা একদিকে যেমন জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না, জনসমর্থন পাচ্ছে না, অন্যদিকে নিজেরাও বিকশিত হতে পারছে না। বরং এর মধ্য দিয়ে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা রকম ভাঙন হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে উপদল, তৈরি হচ্ছে উপদলীয় কোন্দল।অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেও এখন বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটছে। এই রাজনৈতিক মেরুকরণে জাতীয় পার্টির টিকে থাকার সংগ্রামে বেশ ভালোভাবে নিজেদেরকে জানান দিচ্ছে। বাম রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় পার্টির সঙ্গেও যায়নি।

বরং তারা মনে করছে স্বৈরাচারের গর্ভে জন্ম নেওয়া এই অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলটিও আরেকটি লুটেরাদের আশ্রয়স্থল।আওয়ামী লীগের সঙ্গে শুরু থেকেই এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করে রেখেছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও বাম রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে। কিন্তু বাম রাজনৈতিক দলগুলোর এটিও মূল্যায়ন যে, আওয়ামী লীগ এখন অসম্প্রদায়িক চেতনার নয় বরং আওয়ামী লীগ এখন লুটেরাদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় একলা চলার নীতি নিয়ে তারা অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট এবং মেরুকরণের মাঝে হারিয়ে যাওয়া শুরু করেছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ের পর অনেকেই মনে করেছিল এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। বিশেষত যুদ্ধাপরাধের বিচার যখন শুরু হয় তখন বামদলগুলোর সামনে একটি বড় সুযোগ সামনে এসেছিল। কিন্তু নানা রকম বিভ্রান্তি এবং হঠকারীতার কারণে বাম রাজনীতি চোরাবালিতে আটকে পড়ে গেছে। এখন বাম রাজনৈতিক দলগুলো এক এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে যে তারা ক্রমশ বিলীন যেন হবার প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে সামিল করছে। এখন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হল বিএনপি। বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করছে।২২ টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি এখন যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছে। এই সংলাপে বাম রাজনৈতিক দলগুলো যোগ দেয়নি। বাম নেতারা বলছেন যে বিএনপি একটি পুঁজিবাদী এবং লুটেরাদের দল। কাজেই তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তাছাড়া বিএনপির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সম্পর্কের কথাও জোরেশোরে বলেন বাম নেতারা। কাজেই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে আদর্শিক কারণে বাম রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ বা জোটবদ্ধ আন্দোলনে যেতে আগ্রহী হয়নি।এখন যখন রাজনৈতিক উত্তাপ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা তখন বামদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ যুগপৎ আন্দোলনের জন্য ঝাঁপ দিচ্ছে বিএনপির মধ্যে। কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দল ক্ষমতার মধু আহরোণের আশায় ক্ষমতাসীন দলের দিকেও ছুটছে। ফলে বাংলাদেশে বাম রাজনীতিতে একটি ব্যাপক শূন্যতা তৈরি হয়েছে।এই সময়ে ইসলামী দলগুলোর নীরবে-নিভৃতে এগিয়ে যাচ্ছে।

ফলে দেশের জনগণের কত শতাংশ বাম রাজনীতিকে সমর্থন করে এটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাম রাজনীতির বাঁচার উপায় কি? অনেকের মনে করছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যদি তারা জোটবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে হয়তো বাম রাজনৈতিক কিছুটা হলেও বাঁচতে পারে। কিন্তু বাম নেতারা সে পথে যাবেন না তার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।ফলে বাম রাজনীতি বিলীন হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনের পরপর হয়তো বাম রাজনীতির অস্তিত্ব বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Back to top button