বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে ক্রমশ্য প্রকাশ্য হচ্ছে বিদেশি রাষ্ট্রদূতগুলো। এর জবাবে সরকারও কঠোর সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কিভাবে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিভিন্ন মহলের সাথে এ নিয়ে কথাবার্তাও বলছেন।
এটি ইতিবাচক চোখে দেখছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দুজন নেতা যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের সমালোচনা করেছেন এবং তাদেরকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলার পরামর্শও দিয়েছেন। তবে যে পরামর্শই দেওয়া হোক না কেন কূটনীতিকরা এখন এখন মাঠে নেমে পড়েছেন। আগামী নির্বাচনে পশ্চিমা দেশ এবং বিদেশি কূটনীতিকদের একটি বড় ভূমিকা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, আগামী নির্বাচনে দুটি দেশ বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অন্যটি হলো ভারত। এ দুটি দেশের বাইরে অন্য দেশগুলো সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সুস্পষ্ট এবং সরাসরি হলেও ভারতের ভূমিকা নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে। ভারত অবশ্য তার কূটনীতিক এবং সৌজন্যতার জন্যই অন্য দেশের ব্যাপারে প্রকাশ্য বক্তব্য রাখেন না। বরং তারা নীরব এই কাজ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্য বক্তব্য রেখে একটা মেরুকরণ তৈরি করতে চায়, একটি বলয় তৈরি করতে চায়। ভারতের ক্ষেত্রে সেটি প্রয়োজন হয় না। কারণ, ভারতের একটি বলায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে।ভারত কৌশলগত কারণেই মনে করে যে, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের একটি আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। আর এই বিবেচনা থেকেই কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন বর্তমান সরকারের টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় টিকে থাকার পিছনে ভারতের একটা বড় ভূমিকা আছে।
ভারতের কি ভূমিকা আছে না আছে সেটি অন্য বিষয়, তবে আগামী নির্বাচনে ভারত কি ভূমিকা পালন করবে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কারণেই কূটনৈতিক মহল মনে করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অবস্থানগত দূরত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যেমন বাংলাদেশে পুরোপুরি সুশীল নির্ভর এবং সুশীলদের প্রেসক্রিপশনেই এই সমস্ত কথাবার্তা বলছে ভারতের অবশ্য সেই অবস্থা না। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন ক্রিয়াশীল শক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দেখেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ভারতের ভূমিকার সঙ্গে একীভূত হবে না পৃথক অবস্থান গ্রহণ করবে সেটি আগামী নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত শেষ পর্যন্ত অভিন্ন বিন্দুতে মিলিত হয়েছিলো। এবার ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের প্রশ্নে একমত হবে? এটি এখন রাজধানীতে কোটি টাকার প্রশ্ন।কোনো রাজনৈতিক দলই ভারতকে চটিয়ে এখন আর রাজনীতি করতে চায় না। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভারতের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বেশি। ভারত কি চায়, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা আছে, আছে পরস্পরবিরোধী মতামত। বিএনপি নেতারা বলছেন, ভারত এই সরকারকে আর চায়না। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ।
কাজেই তারা মনে করে যে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া এ ধরনের দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভারতের দূরত্ব তৈরি হতে পারে। আবার এর বিপরীত মতও আছে। আওয়ামী লীগের নেতারা পরিষ্কারভাবে বলছেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভালো এবং ভারত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আস্থাশীল। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুক না কেন ভারতে এখন পর্যন্ত কোনো দলের প্রতি পক্ষপাত বা কোনো দলের প্রতি বিরাগ প্রকাশ করেনি। বরং ভারতের পুরো চিন্তা-ভাবনা বাংলাদেশকে ঘিরে, বাংলাদেশের জনগণকে ঘিরে।