বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

বিএনপির বিভ্রান্তির আরেক নাম তারেক

সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়া দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড হলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। যেই হোক না কেন, যত বড় নেতা হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, এহসানুল হক মিলন, আখতারুজ্জামানসহ বিভিন্ন নেতাকে দলের বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কিন্তু একই অপরাধ করে আবার যারা স্বতন্ত্রভাবে উপজেলা নির্বাচন করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তারেক জিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। তারেক জিয়া একজন নেতাকে বলছেন যে, কর্নেল অলি আহমেদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে আবার বিএনপি মহাসচিবকে বলছেন কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। সকালে তিনি বলছেন যে, আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। বিকেলে আবার বলছেন যে, জামায়াতের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। ইকবাল মাহমুদ টুকুকে বলছেন যে, জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ খেলছে। আবার ইকবাল মাহমুদ টুকু যখন পরকীয়ার কথা বলছেন তখন তাকে ধমক দিচ্ছেন।

একবার রুহুল কবির রিজভীকে বলছেন যে, প্রচণ্ড ভারতবিরোধী বক্তব্য রাখতে, আবার পরক্ষণেই বলছেন যে, ভারতের ব্যাপারে তিনি যেন কোনো কথা না বলেন। আসলে তারেক জিয়ার কি চায়, সেটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে বিএনপি। অনেকেই মনে করছেন যে, বিএনপি এবার নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থাকবে। কারণ, তারেক জিয়া এবং খালেদা জিয়া দুজনের একজনও নির্বাচন করতে পারবে না। এ কারণেই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে আগ্রহ নেই। আবার তারেক জিয়া সারাদেশে মনোনয়ন ইচ্ছুকদের তালিকা সংগ্রহ করেছেন এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে তিন থেকে পাঁচ জনের একটি তালিকা ইতিমধ্যে তারেক জিয়ার কাছে প্রস্তুত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় তাহলে তারেক জিয়া এই তালিকা দিয়ে কি করবেন? বিএনপি নেতারা বলছেন, শেষ মুহূর্তে তারেক জিয়া নির্বাচনে আগ্রহী হবেন। কারণ, নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করে প্রচুর টাকা উপার্জন করা হবে। সম্ভবত টাকার লোভেই তারেক জিয়া নির্বাচনে যাবেন।

কাজেই, তারেক জিয়া কখন কি করেন, কখন কি করবেন সে নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে বিএনপি নেতৃবৃন্দ।কয়েকদিন আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছিলেন তাদের নেতা তারেক জিয়া এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্বেই তারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করবেন। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই তিনি তার কথা পাল্টে ফেলেছেন। গতকালের বাসভবন থেকে বেরিয়ে তিনি বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই আন্দোলন হবে। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে নির্বাসিত দুই বছর ধরে। এই সময়কালের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি নেই। এমনকি দলের কোনো বিষয়ে কথাবার্তাও বলছেন না। শুধুমাত্র ঈদ-পার্বণে তিনি স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে ডেকে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন কিন্তু রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করার মতো কোনো আগ্রহ এবং অবস্থা তার নেই।

বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে যে, বেগম জিয়া রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এবং এ নিয়ে তিনি কথাবার্তা বলতেও উৎসাহ বোধ করেন না। বরং তারেকের হাতে তিনি দল ছেড়ে দিয়েছেন। তবু কেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে বললেন? এর কারণ হলো তারেক জিয়াকে নিয়েই এখন বিএনপি সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তিতে আছে। তারেক জিয়ার ব্যাপারে এখন নানা রকম মুখরোচক কথাবার্তা শোনা যায়। তারেক জিয়াকে অনেকে বলেন যে, তিনি সকালে একটি নির্দেশ দেন বিকেলে সেই নির্দেশ পাল্টে ফেলেন, সকালে একজনকে নেতা করেন বিকেলে আবার তাকেই গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। কখন তিনি কি করছেন তা বুঝে ওঠা ভার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ছাত্রদলের ঘটনা দিয়েই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। ছাত্রদলের যে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও সেই পুরো কমিটি লন্ডন থেকে এসেছিল। তারেক জিয়া নিজে এই কমিটি অনুমোদন করে দিয়েছিলেন।

আবার এই অনুমোদন করার পরপরই যখন বিভিন্ন অভিযোগ আসলো তখন তিনি ৩২ জনকে কমিটি থেকে বাদ দিলেন। তাহলে কি তারেক জিয়া যাচাই-বাছাই না করে কমিটি দিয়েছিলেন? যাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, মাদকাসক্তিসহ নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন যখন ৩২ জনকে বাদ হয়েছে তখন পুরো ছাত্রদলের ব্যাপারেই নানা রকম অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছে। ফলে তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Back to top button