২০০৯ এর নির্বাচনে তারেকের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তিনি এখনও সরে এসেছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে ২০১৪ পর থেকেই বিএনপি ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় এবং সেই সূত্র ধরে পরে খালেদা জিয়ার আগ্রহে এক সময় তিনি ২০ দলীয় জোটেও যোগ দেন। তবে তারেক জিয়া কখনোই তাকে পছন্দ করেনি। সব সময় তাকে বিএনপি তারেকপন্থীরা এবং তারেক জিয়া নিজে কর্নেল অলি আহমেদকে বিশ্বাসঘাতক মনে করেন এবং যেকোনো সময়ে তাকে তিনি দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন।
তারেক জিয়া বিএনপির দুইজন পরিত্যক্ত নেতাকে সহ্য করতে পারে না। তাদের মধ্যে একজন হলেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আরেকজন হলেন কর্নেল অলি আহমেদ। কিন্তু সেই অলি আহমেদের সঙ্গেই বিএনপি নেতারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যখন করতে চাচ্ছে তখন প্রশ্ন উঠেছে যে বিএনপি কি আবার একজন ড. কামাল হোসেন খুঁজছে। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, তাদের আন্দোলন হবে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো নয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্যের ওপর আস্থাশীল নয়। তারা জানান বেগম খালেদা জিয়া এখন বিশেষ অনুকম্পায় জামিনে রয়েছেন।
এখান থেকে তিনি কোনো অবস্থাতেই রাজনীতিতে আর যেই হোক নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।গতকাল রাত ৯ টায় বিএনপি নেতারা ছুটে গেছেন মহাখালী ডিওএইচএসে কর্নেল অলি আহমদের বাসায়। বিএনপির নেতারা বলছেন যুগপৎ আন্দোলনের করার লক্ষ্যে কর্নেল অলি আহমেদের দল এলএলডিপি সাথে ঐক্যমতে পৌঁছানো লক্ষ্যে তারা এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। রাত ৯টায় এই বৈঠক কেন? সে প্রশ্ন যেমন বিএনপির মধ্যে উঠেছে তেমনি কর্নেল অলি আহমেদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কর্নেল অলি আহমেদ বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালীন একজন নেতা। বিএনপির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তারেক জিয়ার সঙ্গে মত দ্বৈততার কারণেই ২০০১ সালের পর তিনি বিএনপি থেকে আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এক সময় বিএনপি থেকে বেরিয়ে যেয়ে নতুন রাজনৈতিক দল এলএলইডি গঠন করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তারেক জিয়া ছিল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। মন্ত্রিপরিষদে কারা হবেন না হবেন সেটিও নির্ধারণ করেছিলেন তারেক জিয়া। আর সেখানেই কপাল পোড়ে কর্নেল অলি আহমেদের। বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এবং জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা অবাঞ্ছিত হন। বিএনপিতে তাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এরকম সিদ্ধান্তের পরপরই কর্নেল অলি আহমেদ বিএনপি থেকে থেকে বেরিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি তারেক বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত হয়।অন্যদিকে তারেক জিয়াও বিদেশে আছেন। কোনো অবস্থাতেই তার এখন আপাতত দেশে ফেরার সম্ভাবনা না। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির একজন নেতা দরকার আন্দোলন বা নির্বাচন করার জন্য।
২০১৮ সালে যেমন তারা নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেনকে। কিন্তু তারা বুঝতেই পারেননি যে ড. কামাল হোসেনকে নেতা নির্বাচন করে তারা কত বড় ধোঁকা খেয়েছেন। এবার যেভাবে কর্নেল অলি আহমেদের বাসায় ছুটে গেছেন তাতে বিএনপির অনেকেই বিব্রত এবং বিরক্ত। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, বিএনপি প্রধান দল। কর্নেল অলি আহমেদের এলএলডিপি একটি নামসবর্ম্ব দল। বৈঠক করতে হলে দলীয় চেয়ারপারসনের অফিসে বৈঠক করতে পারত।
অন্য কোনো জায়গায় করা যেতে পারত। কেন কর্নেল অলি আহমদের বাসায় ছুটে যেতে হবে? বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, অলি আহমেদের বাসায় যেভাবে বৈঠক হয়েছে সেটিও আপত্তিকর। সেখানে মূল চেয়ারে বসেছেন কর্নেল অলি আহমেদ। যাকে মনে হচ্ছে যে তিনিই মূল নেতা।অন্যদিকে ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নজরুল ইসলাম খানরা লাগোয়া সোফা বসেছেন। মনে হচ্ছে তারা যেন দর্শন প্রার্থী। এরকম একটি মানসিকতা বিএনপির আন্দোলনকে আরও হতাশায় নিমজ্জিত করবে বলে বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে বিএনপি প্রধান দল। বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন হওয়া উচিত। কিন্তু বিএনপি নেতারা যদি এভাবে অন্য নেতাদের কাছে ধরনা দেন তাহলে কর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসবে। কর্নেল অলি আহমেদ আগামীবার শেষ পর্যন্ত ড. কামালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন কিনা সে নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে।