আওয়ামী লীগের শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে তাহলে সেই আন্দোলনে বাধা দেয়া হবে না। এজন্য তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছিলেন যে, বিরোধী দল যদি আমার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েও আসে তাহলে আমি বাধা দেব না, তাদেরকে চা পানে আপ্যায়ন করবো।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মিরপুর, বনানী এবং হাজারীবাগে কেন সহিংসতার ঘটনা ঘটলো সেটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাই বিভ্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলছেন আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষা একই রকম নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিরোধীদলের হাঁটুভাঙ্গা বলে মন্তব্য করেছেন এবং বিরোধী দল যদি আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমশ সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এই পরিস্থিতির মধ্যে আওয়ামী লীগ রীতিমতো একলা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী ১৪ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয়। ১৪ দলীয় নেতারা এখন প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করছেন।
রাশেদ খান মেনন গতকাল বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো নেই।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই তিনি ব্যস্ত সময় কাটাতে শুরু করেছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিরোধীদলের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই আন্দোলনের কর্মসূচি গুলো ক্রমশ্য সহিংস হয়ে উঠছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ কি করবে? সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ছিল স্ববিরোধী এবং দিকনির্দেশনাহীন। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিয়েছে, আবার কোথাও কোথাও বাধা দিয়েছে।
এরকম বাধা দিতে যেয়ে হাজারীবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী বিএনপির হাতে নাজেহালও হয়েছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ দিকনির্দেশনাহীন। আওয়ামী লীগ যখন এমন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কিছুই হয় না। নেতাকর্মীরা সবকিছুর জন্য তাকিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে।অন্যদিকে যে মহাজোটের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করেছিলেন সেই মহাজোটও এখন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করছে। বিশেষ করে মহাজোটের দ্বিতীয় শরিক জাতীয় পার্টি এখন সরকারবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখন মহাজোট নেই, জাতীয় পার্টি এখন বিরোধী দলে।
এরকম পরিস্থিতিতে সরকার কি করবে? সরকার কোন পথে এগুবে? আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের সাথে কোন ধরনের আচরণ করবে? আওয়ামী লীগ কি বিরোধী দলের সঙ্গে পাল্টা কর্মসূচি দেবে নাকি বিরোধী দলের কর্মসূচি গুলোকে নজরে রাখবে? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি বিরোধী দলের শুধু সমালোচনা করবে নাকি রাজপথে কর্মসূচি গ্রহণ করবে? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনে। যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর গুলো শেখ হাসিনা ছাড়া কারো কাছেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পাবেনা বলে তারা মনে করেন।
আর এ কারণেই শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন, আজকালের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে কিছু নির্দেশনা দিবেন। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির দুঃশাসন অর্থাৎ ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যে সমস্ত অপকর্মগুলো করেছে সেই অপকর্মগুলো প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলে গত ১৩ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তাও প্রচার করতে হবে। তবে বিরোধী দল যে আন্দোলনকে সহিংস করতে চাচ্ছে এবং রাজপথে লাশ ফেলার ব্যাপারে আগ্রহী, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কোন কৌশল নিবে সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।