অন্যান্য দলরাজধানী

ভারত চায় না বাংলাদেশে মার্কিন কর্তৃত্ব থাকুক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে তার আগ্রহ প্রকাশ্য করেছে। এ নিয়ে তারা এখন আর কোনো লুকোচুরি করছেন না। প্রতিদিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলছেন।

স্পষ্টত সরকারের ওপর একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। আর এই চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোয়াডভুক্ত দেশগুলোকেও তিনি সাথে নিতে চাইছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলো যুক্ত হয়ে আগামী নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য কথা বলছেন। রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়েও তাদের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট। কিন্তু এই সমস্ত দৌড়ঝাঁপের মধ্যে ভারতীয় দূতাবাস এক ধরনের দূরত্ব অবলম্বন করে চলেছে।২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও ভারতই ছিল কূটনীতিকদের জন্য মূল পথপ্রদর্শক।

ভারত বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে যেরকম অভিমত এবং অবস্থান গ্রহণ করেছে কূটনীতিকরা সেই অবস্থানকেই শিরোধার্য মেনে নিয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আবার নতুন করে নাক গলাতে শুরু করে। এখন নতুন রাষ্ট্রদূত এসে এই নাক গলানোর মাত্রা যেমন বাড়িয়েছে তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং ভূমিকা ক্রমশ স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের সঙ্গে ভারত নেই এবং এটি আমাদের কূটনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে একা পারবেনা বলে কূটনীতিকরা মনে করেন।

এক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা লাগবে। কিন্তু ভারত নানা কারণে বাংলাদেশে মার্কিন একক কর্তৃত্ব চায় না। এর পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও প্রধান কারণ হচ্ছে পাকিস্তান। ভারত মনে করে যে, কৌশলগত কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখবে। সাম্প্রতিক সময়ে যখন পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার পথে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণে সেখানে বেইল আউট ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য অর্থ দিয়েছে পাকিস্তানকে। এ বিষয়টি ভারত ভালোভাবে নেয়নি।

ভারত মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে ভারত। ভারত চায় না যে বাংলাদেশে মার্কিন কর্তৃত্ব পরিপূর্ণ হবে প্রতিষ্ঠিত হোক।সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ঢাকায় এসেছেন। ঢাকা আসার পর এখন পর্যন্ত তিনি স্পষ্টত কোনো কার্যক্রমের মধ্যে দৃশ্যমান হননি। এর আগে দোরাইস্বামী যখন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, আসার সাথে সাথে বিক্রম দোরাইস্বামী বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা বলেছিলেন। কিন্তু প্রণয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছে উল্টো।

তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে তেমন কোনো কথাবার্তা বলেননি। বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেই অবস্থানের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কি? বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারত কোয়াডভুক্ত দেশ হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে যে নীতি অবস্থান গ্রহণ করেছে তার সাথে তারা একমত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব বাংলাদেশে আবার প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাও ভারত চায়না। ২০০৭ সাল থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে একসাথে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেন আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের অভিন্ন মতামত ছিল এবং দুটি দেশের কূটনীতিকরাই সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আবার ওয়ান-ইলেভেনকে বিদায় করে একটি নতুন নির্বাচনের ব্যাপারেও দুই দেশের ভূমিকা ছিল দৃশ্যমান। এই সময় বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতিতে ভারত যেটি অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটি মেনে নিয়েছে।

Back to top button