অন্যান্য দলবাংলাদেশরাজনীতি

নিভে কি গেলো নুরের আলো?

ডাকসু ভিপি হওয়ার পরপরই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে মা সম্বোধন করেন। ডাকসুর ভিপি হিসেবে তিনি তেমন কোনো কিছুই করতে পারেননি। বরং ছাত্র অধিকার পরিষদকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যান এবং সারাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা ধরে রাখার এক কৌশল চেষ্টা করেন।

২০২০ সালে তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দেন এবং ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর নতুন কার্যালয় উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এ সময় তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, গণঅধিকার পরিষদ আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু এক বছরের মাথায় নুরের রাজনৈতিক দল কার্যকরহীন এবং একটি পেটসর্বস্ব রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে সবগুলো জেলাতেও এই দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পর্যন্ত নেই।

বরং এই দলের প্রধান দুইজন রেজা কিবরিয়া এবং নুর নিজেদের ইমেজ বৃদ্ধির জন্যই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।এক সময় নুর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আরাধ্য ছিলেন। বিএনপিও তাকে কাছে টানতে চাইতো, আবার বাম দলগুলো তার কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখত। অনেকেই মনে করতো যে, বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নুরের মধ্যে রয়েছে এবং তিনি মূল ধারার রাজনীতিতে একটা অবস্থান করে নেবেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, নুরের আসলে নিজস্ব তেমন কোনো আলো নেই। বরং আগামী নির্বাচনে তিনি যেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সেজন্য চেষ্টা তদবির করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ আদায় এবং বিভিন্ন সরকারি কাজ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দেনদরবার করার বিষয়টিও এখন সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের প্রবাসী শাখা গঠন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন নুর। এখন যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিংসহ নানা বিষয় নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের চেষ্টা করছে, তখন নুর একরকম নীরব। তাহলে কি নুর আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন? আগামী নির্বাচনে কি তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন? এই প্রশ্নগুলো এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

তবে নূরের ব্যাপারে অতীতের রাজনীতিতে যেরকম আগ্রহ এবং উৎসাহ ছিল, এখন সে আগ্রহ উৎসাহ নেই। নুর কি তাহলে রাজনীতিতে একটি পরিত্যক্ত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছেন?গত বছর ২৬ অক্টোবর বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে নুর তাঁর নতুন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেছিলেন। গণঅধিকার পরিষদ গঠনের পর রাজনীতিতে নানামুখী চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন যে, এই রাজনৈতিক দলই বাংলাদেশে তৃতীয় ধারার সূচনা করবে। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই নুরের আলো নিভে গেছে।

নুর এখন রাজনীতিতে আর তেমন আলোচিত নয়। বরং বিএনপি যখন রাজপথে বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করছে তখন নুর নিষ্প্রভ, তিনি বিভিন্ন প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ এবং নানারকম ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত। সরকারের সাথে তার গোপন যোগাযোগের কথা প্রকাশিত হচ্ছে এবং সরকারের কাছ থেকে তিনি বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য নিচ্ছেন, এমন খবরও তার কর্মীরা বলছে। এ নিয়ে এখন নুরের অনুসারীরাও তার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।

গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতিও গতিশীল নয়। বরং গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া পৃথক অবস্থান নিয়ে নিজেই আলোকিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। সংগঠনগতভাবে গণঅধিকার পরিষদেরও তেমন কার্যক্রম নেই। মূলত কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নুর আলোচনায় আসেন। এরপর তিনি ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করেন এবং ছাত্রলীগের বিপুল দাপটের মধ্যেও ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে সবাইকে চমকে দেন।

Back to top button