প্রত্যেকবার ২০১৪ সাল হবে না, ২০১৮ সাল হবে নাঃ টুকু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘২০২৩ সালে আমরা হয় মরব, নাহয় গণতন্ত্রকে উদ্ধার করব।’ গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর বিএনপির পশ্চিম জোনে উত্তরা পশ্চিম থানার কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় সমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে বাধার মুখে পড়েন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের লাঠিপেটা করেছেন এবং ধাওয়া দিয়েছেন বলে সমাবেশে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।

জ্বালানি তেল, গণপরিবহনের ভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে শাওনের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক সমাবেশ করছে বিএনপি। গতকালেরটি ছিল চতুর্থ সমাবেশ। এ ছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আরও ১২টি স্পটে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের পাশে থাকতে চাই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ করায় এরই মধ্যে আমাদের তিন সন্তান মায়ের বুক খালি করে চলে গেছেন। এর জবাব কে দেবে?

তিনি আরও বলেন, আমরা ভোটের আগে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাই, আশ্বাস দেই, ভোট চাই। আর আওয়ামী লীগ সরকার ভোটের আগে ভারত যায়, যুক্তরাজ্যে যায়, যুক্তরাষ্ট্রে যায়। তারা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে না। ষড়যন্ত্র করে বিদেশি শক্তির সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়, তারা সে চেষ্টা করে। প্রত্যেকবার ২০১৪ সাল হবে না, ২০১৮ সাল হবে না। ২০২৩ সালে আমরা হয় মরব, নাহয় গণতন্ত্রকে উদ্ধার করব।’

সমাবেশ শেষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সমাবেশে আসার পথে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, বাধা দিয়েছে। এতে ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জনের অবস্থা গুরুতর। এত বাধার পরও আমরা সমাবেশ সফল করেছি।’

সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমদু টুকু অভিযোগ করে বলেন, ‘এ মিটিংয়ে আসার পরে আওয়ামী দাঙ্গাবাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের ২৫ থেকে ৩০ জন ছেলের রক্ত ঝরেছে।’ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান টুকু।

খালেদা জিয়ার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করেছিলেন। সে নির্বাচনে পরাজয় বরণ করে বিরোধীদলের আসনে বসেছিলেন। আপনারাও খালেদা জিয়ার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে নির্বাচন দিন। দেখেন কে হারে, কে জেতে।’

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী রাজারবাগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেদিন আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু, সেই পুলিশ ভাইয়েরা যখন কথায় কথায় জনগণের ওপর গুলি চালান, তখন আমরা কষ্ট পাই।

এ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এ পুলিশ এখন মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে রক্ত বের করে। আমি কিন্তু সব পুলিশ ভাইদের দোষ দিচ্ছি না। সিংহভাগ পুলিশ বন্দুক তাক করতে চান না। কিন্তু, চাকরির ভয়ে তারা এ কাজ করেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ নেতা বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করে জনগণের জন্য, বিএনপি আন্দোলন করছে গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। জনগণের ভোটে বিএনপি যদি ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পায়, একা যাবে না। এখন যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করছে তাদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবে, নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবে—এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, তাবিথ আউয়াল, নাজিম উদ্দিন আলম, ইয়াছিন আলী, ঢাকা মহানগরের উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে 

Exit mobile version