আইন-আদালতবাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ দিনে ৪৬টি মামলা

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত ২২ দিনে ৪৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ২১ হাজার ৭০৯। এর মধ্যে এজাহারে ২ হাজার ৭৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিরা অজ্ঞাতনামা।

আসামিদের বেশির ভাগই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে অসুস্থ, প্রবীণ ও প্রবাসে থাকা ব্যক্তিও রয়েছেন।১৮টি জেলায় দায়ের হওয়া এসব মামলার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিএনপির অভিযোগ, তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে রাশ টানতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একের পর এক হামলার পাশাপাশি পুলিশও বাধা দিয়েছে। এরপর এসব ঘটনায় উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং গত ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদে ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হয়।

গত ২২ আগস্ট থেকে গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৪৮টি কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২৫টি স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।

আর একই স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ থাকায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে ১৭টি স্থানে। এসব ঘটনায় যে ৪৬টি মামলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ২৯টির বাদী পুলিশ। বাকি ১৭টি মামলার বাদী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৩১ জুলাই ভোলার ঘটনা থেকে শুরু করে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় দলের ৩ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। এসব ঘটনায় ২০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার জনকে।

১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষকালে গুলিতে যুবদলের কর্মী শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় দুই মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাতসহ আসামি ৫ হাজার ৯৭১ জন। এরপর গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু বলেন, যাঁরা মামলার আসামি, তাঁরা গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জে বিএনপির ৫৫ নেতা-কর্মীকে এজাহারনামীয় এবং ১৮৫ জনকে অজ্ঞাত করে তিনটি মামলা হয়। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, মামলার আসামি না হয়েও অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের ভয়ে নেতা-কর্মীরা এখন এলাকাছাড়া।

নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত ১৪টি মামলায় ৪ হাজার ৭২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘গায়েবি মামলায়’ অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

৪৬ মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসামি হিসেবে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী। তবে অসুস্থ, বয়সের কারণে চলাফেরা করতে পারেন না, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে আছেন, ব্যবসায়িক কাজে অন্যত্র ছিলেন—এমন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা এবং পুলিশের গুলির ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, সব জায়গায় এই ঘটনাগুলো ঘটছে না বা সব পুলিশই এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে না।

কয়েকটা জায়গায় অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগঠন। আমরা কখনোই পুলিশকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। আমরা এটাও মনে করি যে তাদের সংবিধানিক যে দায়িত্ব আছে, সেই দায়িত্ব তারা পালন করবে।’

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে 

একটি মন্তব্য

Back to top button