শেয়ার কারসাজির ঘটনায় অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নাম
শেয়ার কারসাজির ঘটনায় অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নাম এসেছে। যদিও সাকিবকেই শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।
এদিকে সম্প্রতি সাতটি কারসাজির ঘটনায় বিএসইসি জরিমানা করে যে আদেশ দিয়েছে, তার চারটির তদন্তে শীর্ষ শেয়ার কেনাবেচাকারীর নামের তালিকায় সাকিব এবং তার মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংসের নাম এসেছে।যেসব শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাকিব আল হাসানের নাম এসেছে, সেগুলো হল- ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুজ এবং এনআরবিসি ব্যাংক।
এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হয়েছিল গত বছর। এ বছরের শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি বিডি কম অনলাইনের কারসাজির ঘটনায়ও শীর্ষ ক্রেতার ভূমিকায় ছিল মোনার্ক হোল্ডিংস। এই ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানায় সাকিবের সঙ্গে যৌথভাবে আছেন হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান।
ক্রিকেটার সাকিব শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আলোচিত বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরোর সঙ্গে শেয়ার কারসাজি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তদন্তে কারসাজি সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলোর শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে সাকিবের নাম পেয়েছে।
বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুধু সাকিব নন, হিরোর শেয়ার কারসাজির তদন্তে চক্রের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেপ ইনফোসিস, ফরচুন সুজ এবং সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলসসহ আরও অনেকের নাম এসেছে। কিন্তু শুধু হিরোর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মাতবর, স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বোন কনিকা আফরোজ এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতি ডিআইটি কো-অপারেটিভকে জরিমানা করা হচ্ছে।
ওয়ান ব্যাংকের কারসাজির ঘটনায় হিরোর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে জরিমানা করে গত ২ আগস্ট যে আদেশ বিএসইসি দেয়েছে, তার কপি সম্প্রতি নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ওই আদেশ থেকে জানা গেছে, ওয়ান ব্যাংকের কারসাজির ঘটনায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর সময়ে, অর্থাৎ দুই সপ্তাহের শেয়ার লেনদেন খতিয়ে দেখতে তদন্ত করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।
তাতে দেখা যায়, উল্লিখিত সময়ে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের শীর্ষ ১৫ ক্রেতার তালিকার আট নম্বরে ছিল সাকিব আল হাসানের নাম। ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট নামক মার্চেন্ট ব্যাংকের ১৬০৫৫৪০০৭৪১৪০৭১৯ নম্বর বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৫ লাখের বেশি শেয়ার কিনে ১০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন।
গত দুই বছরের কারসাজির ঘটনায় হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে গ্রীণডেল্টা ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কারসাজির ঘটনায় এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া হিরোর বাবাকে ওয়ান ব্যাংক ও ফরচুন সুজের কারসাজির ঘটনায় সাড়ে চার কোটি টাকা, বোন কনিকা আফরোজকে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় পৌনে চার কোটি টাকা এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভকে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও বিডিকম অনলাইন কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোনার্ক হোল্ডিংস নামক ব্রোকারেজ হাউস ছাড়াও মোনার্ক মার্ট নামক ই-কমার্স সাইটে হিরোর ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসান নিজে কোনো শেয়ার কেনাবেচা করতেন না। তার হয়ে সব শেয়ার কেনাবেচার আদেশ দিয়েছেন হিরো।
হিরো তার নিজের, স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, নিজের মালিকানাধীন সমবায় সমিতি ডিআইটি কো-অপারেটিভের নামে শেয়ার কিনে আগে বেচে বেশি মুনাফা নিলেও সাকিবের অ্যাকাউন্টে কেনা শেয়ার পরে বিক্রি করেছেন।
বর্তমানে ক্যারেবিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবস্থান করায় এ বিষয়ে সাকিব আল হাসানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মিরপুর বিসিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের শেয়ার কারসাজি নিয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন বলেন, এটা ক্রিকেটের বিষয় না। এ নিয়ে কিছু বলার নেই বলে জানান তিনি।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে