মাশরুম চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩০ জন কর্মকর্তা

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নেওয়া প্রকল্পেও বিদেশ ভ্রমণ গুরুত্ব পাচ্ছে। এবার মাশরুম চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩০ জন কর্মকর্তা। ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। আর দেশে প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৯ কোটি তিন লাখ টাকা।

প্রকল্প প্রস্তাবে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ প্রত্যেকের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা করে। এই কর্মকর্তারা কারা, তাঁরা কী প্রশিক্ষণ নেবেন এবং কোন দেশে যাবেন—তা স্পষ্ট করে বলা নেই প্রস্তাবে (ডিপিপি)।

‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ তা একনেকে অনুমোদনের জন্য ওঠার কথা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রথমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৫৭ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল; কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কমানো হয়। এখন মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০ কোটি ২৩ লাখ টাকাই প্রশিক্ষণে খরচ হবে। অনুমোদন পেলে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি জানার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন আছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে উন্নত জ্ঞান আহরণ গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বিদেশ যাওয়ার সুপারিশ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার বিদেশ যাওয়া নিরুৎসাহিত করছে, এটি জেনেই সঠিক লোক যাতে যেতে পারে সেদিকে নজর রাখছি। ’

এই সংকটময় সময়ে এমন প্রকল্প অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পটি আপাতদৃষ্টিতে খুব প্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে না। তার ওপর আবার বিদেশ ভ্রমণে টাকা ব্যয় হবে। আমার মতে, যখন চলমান সংকট কেটে যাবে, আমরা যখন আরো স্বাবলম্বী হবো; তখন এমন প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। ’

প্রকল্পের মূল কাজ হবে ৯৫টি ছাদ প্রদর্শনী করা। ৮০০টি স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা। ৬০০ বর্গমিটার ডরমিটরি এবং ৪৫০ বর্গমিটার ল্যাবরেটরি কাম অফিস ভবন সম্প্রসারণ। ৯৫০ বর্গমিটার ওয়ার্কশপ কাম ল্যাবরেটরি ভবন, একটি ইনকিউবেশন রুম এবং ৩৫টি ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিট নির্মাণ। পাশাপাশি ৫০০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।

প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় তিন ব্যাচে পর্যায়ক্রমে ৩০ জন কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ২৭ ব্যাচ উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ৮০০ ব্যাচ দলভুক্ত চাষির প্রশিক্ষণের ১০ কোটি আট লাখ টাকা।

এ ছাড়া ১০০ ব্যাচ ছাদবাগানি বা সাধারণ চাষির প্রশিক্ষণ বাবদ ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ৮০০ ব্যাচ নতুন দলভুক্ত চাষিকে প্রশিক্ষণের জন্য এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২৯ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) বা উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তার (এসএএইচও) প্রশিক্ষণে এক কোটি ৭৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, সাত ব্যাচ প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ২৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাসচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘এই প্রকল্পের বিষয়ে সরাসরি আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, এই সময়ে যতটা প্রয়োজন ব্যয় সংকোচন করা। তবে সব বিদেশ ভ্রমণ যে অহেতুক, এমনটা নয়। সামান্য কিছু টাকা ব্যয় করে যদি দেশের বিজ্ঞানীরা বিদেশ থেকে কিছু শিখে আসতে পারেন তাহলে তাঁরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারেন। ’

৯ ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ লাখ টাকা, ছয় ব্যাচ জিও (সরকারি অফিসার) ও এনজিও কর্মকর্তার প্রশিক্ষণে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়।এর বাইরে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ বদলি ভ্রমণ ব্যয় এক লাখ ৫২ হাজার টাকা ধরা হয়।

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে 

Exit mobile version