মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত জাতির সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার ১২ই সেপ্টেম্বর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। স্থায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের মূলকথা অনেক আগেই বলছি যে একটি সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এ সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, যাদের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, তারা সবদলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটের পরিবেশ তৈরি করবে। যাতে ভোটাররা দিনে ভোট দিতে পারেন।
আমাদের নেতা বলেছেন, আমরা নির্বাচনের পরে আন্দোলনকারী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। প্রধান কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে সেগুলোকে এককভাবে গড়ে তোলাটা সমুচিত হবে না, তাই অন্যান্য দলকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে এখনো ফরমাল কোনো আলোচনা হয়নি বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছি। আন্দোলনের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে কি হবে তা নির্ধারিত হবে। আর জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা এখনো ফরমাল কোনো আলোচনা করিনি। আলোচনার দরজা খোলা আছে, রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি সংগঠন যারাই এ কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বারবার বলার চেষ্টা করেছি যে পুলিশ প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান। তার মৌলিক দায়িত্বগুলো হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাশকতা বন্ধ করা। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্ব একটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্দেশ আসে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশকে কখনো আক্রমণ করা হয়নি। পুলিশ আগ বাড়িয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র যারা হামলা করে তাদের সহায়তা করতে গিয়ে ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দলের ছেলেরা গুলিতে মারা যাচ্ছেন, কেউ চোখ হারাচ্ছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য। মামলার ভয়ে অনেকেই আহত হওয়ার কথা বলে না, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকতে চায় না।
তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, হামলা করছে আওয়ামী লীগ আর সেখানে পুলিশ বাদী হয়ে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীর নামে মামলা দিচ্ছে। সরকার চাইলেই একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। আমাদের দাবি একটাই পরিবেশ তৈরি করো, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করো, ভোটাররা তাদের যেন পছন্দের প্রতিনিধিকে বেছে নিতে পারেন।
ক্ষমতাশীনদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয় সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না এমন প্রশ্নের তীব্র সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হয়েছিল আবার সংবিধান তারাই পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আসে। এখন যেহেতু আপনারা আপনাদের দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি সংসদে তাই সেটা ফিরিয়ে আনা আপনাদের জন্য সহজ। দেশের জন্য মানুষের জন্য এবং বাংলাদেশকে একটি চিরস্থায়ী সহিংসতা থেকে বন্ধ করার একমাত্র পথ নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ নীতি নিয়ে সরকারের বিধান চালু করা।
বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ