ক্রমান্বয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ
পুলিশ পরিচয় দিয়ে দুর্বৃত্তরাও নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব অভিযোগের পরিমাণ আরও বেড়েছে। সদস্যদের এ ধরনের অপরাধে জড়ানো ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণ।সম্প্রতি পল্লবী থানার সাদা পোশাকধারী এএসআই মাহবুবুল আলম একজন সোর্সের কাছ থেকে ইয়াবার প্যাকেট নিয়ে খলিলুর রহমান নামের এক পথচারীর পকেটে ঢুকিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
চট্টগ্রামে টাকা না পেয়ে তিন যুবককে তুলে নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায় পুলিশ। তুচ্ছ ঘটনায় প্রথমে তুলে আনা হয় থানায়। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে না পেয়ে চালানো হয় নির্যাতন।পরে ডাকাতির প্রস্তুতির সাজানো মামলায় পাঠানো হয় কারাগারে। তাদের তুলে আনা হয় এক জায়গা থেকে, মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় অন্য জায়গায়। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের ভুজপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত চার বছরে বিভিন্ন অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গড়ে মাসে ১৩৫৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতিবছরই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শাস্তি পাওয়া পুলিশের সংখ্যা ১০ হাজার ৪২১ জন। ২০১৬ সালে ১৩ হাজার ৫৮৬, ২০১৫ সালে ১১ হাজার ১৬৭, ২০১৪ সালে ১৫ হাজার ২৯৭, ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ৬০ এবং ২০১২ সালে ১২ হাজার ৯৯২ জন পুলিশ সদস্য অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে চাকরিচ্যুতি বা বরখাস্ত হয়েছে ৫০৬ জন। বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে ৩৬ জনকে।
২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জনের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে। পরের বছর এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫১২। ২০২০ সালে আরও বেড়ে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১২। গত বছর ১৬ হাজার ৪১৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও পুলিশের সব ইউনিট প্রধানের কাছে প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে অভিযোগ আসছে। গত সাড়ে ৪ বছরে ৬১ হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে বলে সদর দপ্তর সূত্র জানায়। ২০১৭ সালের ১৩ই নভেম্বর সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক আইজিপি কমপ্লেইন সেল চালু করার পর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি আসছে। এসব অভিযোগ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশের অপরাধ রুখতে প্রতিটি জেলায় গোয়েন্দাদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ সুপাররা টিম গঠন করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশ আইন অনুযায়ী, কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির (লঘু ও গুরু) বিধান রয়েছে। গুরুদণ্ডের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদোন্নতি স্থগিত, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত ও চাকরিকালীন সুযোগ-সুবিধা রহিত করা হয়। অপরাধ প্রমাণ হলে বরখাস্ত করা হয়।
বিসিএস ক্যাডারের পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে একটি সেল রয়েছে। গত ছয় মাসে এসব নানা অভিযোগে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. হায়দার আলী খান বলেন,পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের নিষ্পত্তি হয় মূলত প্রচলিত আইন অনুযায়ী। অভ্যন্তরীণ বা বাইরের কারও কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ইউনিট প্রধান অভিযুক্ত সদস্যকে কল করেন। এতে করে যখন একজন অভিযুক্ত সদস্যের শাস্তি নিশ্চিত হয় তখন ডিপার্টমেন্টের বাকি সদস্যরা মেসেজ পেয়ে যায়। এটা তাদের জন্য এক ধরনের হুঁশিয়ার বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের নতুন উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, কেউ যদি ভুয়া পুলিশ কিংবা পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধের শিকার হচ্ছেন বলে সন্দেহ হয় সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অপরাধের মামলার পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা, সাময়িক বরখাস্তসহ সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুত করার বিধান রয়েছে।।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে
বাস্তব সত্য কথা বলেছেন।
বাস্তব সত্য কথা বলেছেন।