কারাগারে থাকা বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হয় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার স্কুলপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ওই কিশোরীটি। বাবাও নেই বাড়িতে, ভাইও নেই। পরিবারে আছে শুধু বৃদ্ধ মা ও দাদি। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও নেই তার পরিবারে। ফলে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে অসহায় পরিবারটি।
গ্রামের আবুল হোসেন জানান, বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে ও নাতিরা পৃথক ঘটনায় সবাই কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। আর একজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের ভয়ে। বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে একমাত্র নাতনি ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন আছে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি বাড়িতে না থাকায় খুব কষ্টে আছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, গত শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের অদূরের গোবিন্দনগর এলাকা থেকে হাত ও মুখ বাঁধাসহ অচেতন অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।তিনি জানান, ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই কিশোরীকে হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন আছে। ডাক্তারি পরীক্ষার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উঠোনের এক কোণে ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন। কাছে গেলে বলে ওঠেন- কেবা তোমরা! ক্যানে হামার বাড়ি আসিছেন। ভয়ে কেঁদে দেন তিনি। কপাল ঠুকে বলে কী ছিল এই কপালে। বেটাও জেলে-নাতিও জেলে। এই বলে মূর্ছা যান তিনি।
প্রাথমিক চিকিৎসায় জ্ঞান ফেরার পর ভুক্তভোগী জানায়, ওই দিন দুপুর ১টায় বালিয়াডাঙ্গী থেকে থ্রি-হুইলারে চড়ে বাবা-ভাইকে দেখতে ঠাকুরগাঁও শহরে যাচ্ছিল সে। পথে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত গাড়িটির গতিরোধ করে উঠে পড়ে। এ সময় গাড়ির ভেতরে ধারালো ছুরি দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক তাকে অজ্ঞাত একটি স্থানে নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে তাকে পালাক্রমে যৌন নিপীড়ন চালায় দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা।তবে কিশোরীর দাবি, দুর্বৃত্তদের ৬ জনের মধ্যে ৩ জন তার এলাকার এবং সম্পর্কীয় আত্মীয়। ওই চিহ্নিত তিন ব্যক্তির সঙ্গে তাদের জমিসংক্রান্ত নিয়ে বিরোধ চলছে। অপর ৩ জন মাস্ক পরা থাকায় তাদের চিনতে পারেনি সে।
ঘটনায় অভিযুক্ত বাবুল বলেন, মেয়েটি আমার ফুফাতো ভাইয়ের মেয়ে। তার বাবার সঙ্গে জমির বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার রেশ ধরে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।বড়পলাশবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন মিয়া বলেন, জমি নিয়ে তাদের বিরোধ চলছে। পরিবারগুলোর একরোখা মনোভাবের কারণে স্থানীয়ভাবে তা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাকিবুল ইসলাম চয়ন বলেন, মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি খায়রুল আনাম বলেন, এ মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে বিশেষ কারণে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
ওই গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আবু রোমান জানায়, স্কুলছাত্রীর পরিবারটির সঙ্গে একই এলাকার বাবুল ও রেজাউল জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চরমে উঠেছে। এ বিরোধের জের আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এক বছর ধরে মামলা চলছে তাদের।নির্যাতিত ওই কিশোরীর মা বলেন, সবাই জোট বেঁধেছে আমাদের বিরুদ্ধে। এ যেন দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে