বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের মাঠকর্মী আবুল কাশেমের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক নারীকে চাকুরি থেকে ছাঁটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, আবুল কাশেমের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার তিন মাসের বেতন আটকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত ২৭ আগস্ট হলদিয়াপালং মরিচ্যা বাজারের পেছনে শেড ঘরে তাকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন আবুল কাশেম এবং তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন। পরদিন ওই নারীর নামে অব্যাহতি ছাড়পত্র ইস্যু করেন আবুল কাশেম।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী এবং সুশীলন (ইএফএসএন-৪) প্রকল্পের আওতাধীন হলদিয়াপালং ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠকর্মী আবুল কাশেম একই প্রকল্পে কাজ করতেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন আবুল কাশেম। গভীর রাতে ভিডিও কল দেওয়া ছাড়াও কারণে-অকারণে হাত ধরে টানাটানি করতেন তিনি। বিষয়টি সহকর্মীরা জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবুল কাশেম বলেন, ‘সুশীলনে চাকরি করার সময় ওই নারীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে তিনি আমার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।’
যদিও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অসত্য দাবি করে ওই নারী বলেন, ‘উপকারভোগীরা নিজেরাই আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। আমরা কেবল তাদের সহায়তা করি। মাঠ জরিপ করলে এর সত্যতা মিলবে। এ ছাড়া সংস্থাটি আমাকে ক্লিয়ারেন্স ছাড়পত্র দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশীলনের প্রাক্তন মাঠকর্মী সুবোধ বিশ্বাস বলেন, ‘মাঠকর্মী কিংবা ওই নারী কর্তৃক অর্থ নয়-ছয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ টাকা আদান-প্রদান করে স্ব-স্ব সমিতির সভাপতি/সম্পাদক।’তিনি আরও বলেন, ‘এনজিও সুশীলন স্টাফদের ঠিকমতো বেতন দেয় না। কারো কোনো অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়।’ পাশাপাশি নারী কর্মীদের যৌন হয়রানির বিষয়টি মিথ্যে নয় বলে তিনি জানান।
সুশীলনের নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান বলেন, ‘ওই নারী এর আগে নুরুল ইসলাম নামে সুশীলনের উচ্চ পর্যায়ের একজন পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছিলেন। তাকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত আবুল কাশেম কর্তৃক কুপ্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের কারণে ওই নারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুশীলন যেকোনো অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা যৌন হয়রানির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উপকারভোগী ও পশ্চিম মরিচ্যা বকুল দলের সভাপতি রোজিনা আকতার বলেন, ‘ওই নারী টাকা আত্মসাত করেনি। আবুল কাশেম তাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন বলে আমরা জেনেছি।’ একই কথা বলেন ওই এলাকার বেলী দলের সেক্রেটারি আবুল কালামের স্ত্রী শাহীনা আকতার।
তবে সুশীলনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘ওই নারীর অভিযোগ মিথ্যা হতে পারে। কারণ তিনি এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি। আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দিলে তাকে তিন মাসের বেতন দেওয়া হবে।’ এ ছাড়া ওই নারীকে তার সই করা ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ের ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সুশীলনের একজন নারী কর্মীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ওই নারী কর্মীকে ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া রেখে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’ তার বেতন আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে