আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে অব্যাহতি

বরিশাল জেলা শাখা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বরিশাল-৪ আসনের (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শনিবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরে একটি অব্যাহতিপত্র পঙ্কজ দেবনাথকে দেয়া হয়েছে।অব্যাহতিপত্র পাওয়ার তথ্য রবিবার নিশ্চিত করেছেন নানা অনিয়মে দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়া এমপি পঙ্কজ দেবনাথ।

এমপি পঙ্কজ বলেন, আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি। আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এই চিঠি আমিও পেয়েছি। কিন্তু কেন দিয়েছে তা আমি জানি না। জানার চেষ্টা করছি।

আজ সোমবার দুপুরে চিঠিটি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় অন্যান্য সকল পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করেছে। উক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী পনের (১৫) দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা প্রদান করার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

এর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার পর ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন তিনি।

গত জুলাই মাসে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে তাকে প্রয়োজনে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে কোপানোর নির্দেশনা দিতে শোনা যায়।

এছাড়াও সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের অভিযোগও আছে। ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি, দখল সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, জমি দখল এবং অবৈধভাবে অর্থ সম্পদ অর্জনসহ ১৬টি অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সঞ্জয় চন্দ্র নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময় কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল খান। পক্ষটি জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট। অপর পক্ষে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।

সর্বশেষ ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। আহত নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। অন্যদিকে ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী।

অব্যাহতির বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. বলেন, গত চার বছরে মেহেন্দীগঞ্জে দলকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পঙ্কজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Exit mobile version