‘এই ভবন থেকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় না’, মাগুরা শহরের ভায়না টিটিডিসি পাড়ার ১৩৮ নম্বর বাড়িতে টাঙানো হয়েছে এমন একটি সাইনবোর্ড। প্রায় এক দশক ভবনটি জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে পরিচিত।
তবে গত সপ্তাহে ভবনমালিকের পক্ষ থেকে ওই সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি ও প্রশাসনের চাপের কারণে তাঁদের ওই রাজনৈতিক কার্যালয় ছাড়তে হয়েছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খান হাসান ইমাম বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে থেকে সেখান থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কৌশলগত কারণে কার্যালয়টি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২৭ আগস্ট সমাবেশে হামলার পাশাপাশি ওই ভবনেও ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ভবনমালিকের পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতারা ও প্রশাসনের লোকজন তাঁদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। এ জন্য কার্যালয়টি তাঁদের ছাড়তে হয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দশক আগে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খান হাসান ইমাম ওরফে সুজা তিনতলাবিশিষ্ট ওই ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ ব্যবসায়িক কাজে ভাড়া নিয়েছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে কক্ষটি রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেন ওই নেতা। পরে সেটি জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিএনপি নেতারা জানান, শহরের ইসলামপুর পাড়া ও ভায়না এলাকার ওই কার্যালয় থেকেই দলীয় কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল। গত ২৭ আগস্ট জেলা বিএনপির যে বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা হয়, সেটা ওই কার্যালয়ের সামনেই হচ্ছিল। ওই দিন কার্যালয়সহ ওই ভবনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এরপর মালিকপক্ষ বিএনপির নেতাদের কার্যালয় ছেড়ে দিতে বলে।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তা ছাড়া একজন ভবনমালিক তাঁর ঘর কোথায়, কী কারণে কার কাছে ভাড়া দেবেন, এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এখানে অন্য কেউ চাপ দেওয়া না দেওয়ার কিছু নেই। আমাদের পক্ষ থেকে কেউ এ রকম কিছুই করেছে বলে আমার জানা নেই।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের চাপ দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কোন দলের কার্যালয় কোথায় থাকবে, এটা তো আসলে পুলিশের বিষয় না। তিনি কয়েক দিন আগে একজন দোকানির কাছে জানতে পারেন, ভবনমালিক কার্যালয়টি সরিয়ে নিতে বলেছেন। কারণ, ওই দোকান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাকি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য এ বিষয়ে ভবনমালিকের সঙ্গে তাঁদের কোনো কথা হয়নি।
এ বিষয়ে ভবনমালিকদের একজন নুরুজ্জামান ওরফে বাবু বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যালয় থাকায় আমার ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছিল। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আমি তো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই। এ কারণেই বিএনপি নেতাদের বলেছি। তাঁরাও বিষয়টি বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়েছেন।’
নুরুজ্জামান জানান, ২০০৫ সালে বিএনপি নেতার ভাই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভবনটি ভাড়া নিয়েছিলেন। কার্যালয় ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো চাপ দিয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে