রাজধানীর খিলক্ষেতে এক পথচারীকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে এক পুলিশ সদস্য ও তাঁর দুই তথ্যদাতাকে (সোর্স) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পল্লবী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুল আলম, তাঁর দুই সোর্স সোহেল রানা ও রুবেল হোসেন।
পুলিশের পল্লবী অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. আবদুল হালিম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর বুধবার রাতে পল্লবী থানার পুলিশ বাদী হয়ে মাহবুব, সোহেল ও রুবেলের বিরুদ্ধে মাদক রাখা এবং মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করে। পল্লবী থানা–পুলিশ তাঁদের ক্যান্টনমেন্ট থানায় সোপর্দ করেছে।
একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত খবর সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে সাদাপোশাকে এএসআই মাহবুব সোর্স রুবেলের কাছ থেকে এক প্যাকেট ইয়াবা এনে তা খলিলুর রহমান নামের এক পথচারীর পকেটে ঢুকিয়ে দেন। পরে তাঁকে মাদক রাখার অভিযোগে আটক করে মারধর করেন।
একপর্যায়ে মাহবুব পথচারী খলিলুরকে একটি ভাড়া করা অটোরিকশায় তুলে পল্লবী থানায় নিয়ে যান। সেখানে খলিলুরের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা করেন তিনি। মামলায় খলিলুর এখন কারাগারে আছেন।অবশ্য এএসআই মাহবুব দাবি করেন, খলিলুরের কাছে ১৩৫টি ইয়াবা বড়ি পাওয়া গেছে। মাহবুবুল আলমের হাতে ইয়াবার প্যাকেটটি কে তুলে দিয়েছে, জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে বলেন, তাঁর সোর্স রুবেল।
ক্যান্টনমেন্ট থানা–পুলিশ জানায়, মাহবুবুল আলম ও তাঁর দুই সোর্সকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এএসআই মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ফাঁসানোর অভিযোগ নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের মুঠোফোন মেরামতকারী হাবিব শেখের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে তাঁকে হেরোইনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন মাহবুবুল।
এ ঘটনায় হাবিব শেখের স্ত্রী সাথী আক্তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে পল্লবী থানার এসআই কাজী রায়হানুর রহমান ও এএসআই মাহবুবুল আলম দুই সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে হাবিবকে ধরে থানায় নিয়ে যান। পরে তাঁর (সাথী আক্তার) কাছে তিন লাখ চাঁদা চান তাঁরা। চাঁদা না দেওয়ায় হাবিবকে হেরোইনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
সাথী আক্তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, পল্লবী থানা চত্বরে ফর্মা (পুলিশের তথ্যদাতা) মিজান তাঁকে বলেন, এসআই রায়হানুর রহমান ও এএসআই মাহবুব তিন লাখ টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে বলেছেন। রাতে এত টাকা কোথায় পাবেন, ফর্মাকে জানানোর পর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা থানায় তাঁর স্বামীকে হাত–পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরে মামলা দেন। পল্লবী থানা এমন আরও অনেকের নামেই হেরোইনের মামলা দিয়ে হয়রানিপূর্বক টাকা আদায় করেছে বলেও সাথী আক্তার আবেদনে উল্লেখ করেন।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল হালিম বলেন, গ্রেপ্তার মাহবুবকে বৃহস্পতিবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পল্লবী অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ উপকমিশনার আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তাঁর বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মাহবুবুল হককে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে