মানুষ জীবনকে সহজ করতেই ভালোবাসে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষকে তাই এমন কিছু গ্যাজেট বেছে নিতে হয়, যেন খুব দ্রুত ও সহজে সে তথ্য জানতে পারে। সে কাজটি আজকাল পূরণ করছে স্মার্টফোন।
কিন্তু স্মার্টফোনের পাশাপাশি স্মার্টওয়াচের আবেদনও বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে বিভিন্ন মূল্যের স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ বিশেষত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই গ্যাজেটেদের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের সুবিধা কী? সেই সব কথাই বলবো আজ।
স্বাস্থ্যসচেতনদের পার্সোনাল ট্রেইনার
করোনা মহামারির সময়ে কমবেশি সবাই স্বাস্থ্যসচেতন হতে শুরু করেছেন। স্মার্টওয়াচে হার্টরেট সেন্সর, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকারসহ অনেক কিছুই থাকে। ফলে আপনার হার্ট রেট, আপনি কতটুকু হেঁটেছেন, কতটুকু ওয়ার্ক আউট করেছেন, ক্যালরি কতটুকু ঝরিয়েছেন, তার সবই জানতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। স্মার্টওয়াচ হলেই হবে না। কারণ নিম্নমানের স্মার্টওয়াচে যে সেন্সর ব্যবহার করা হয়, তা নির্ভুল তথ্য নাও দিতে পারে। তাই কেনার আগে ভালো মানের স্মার্টওয়াচ কিনুন।
স্মার্টফোনের বদলে স্মার্টওয়াচ
স্মার্টওয়াচ পুরোপুরি স্মার্টফোনকে টেক্কা দেবে, একথা বলার সুযোগ নেই। তবে স্মার্টফোনের সাধারণ ফিচারগুলো কিছু কিছু স্মার্টওয়াচও নিয়ে আসে। শুধু একটা সিম থাকলেই আপনি স্মার্টওয়াচটিকে একটি ফোন বানিয়ে নিতে পারবেন। হ্যাঁ, আপনাকে ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে না। এতে যারা মোবাইলফোন আসক্তি কমাতে চান, তাদের সুবিধা হবে। একইসঙ্গে ইন্টারনেট সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে হবে না। আপনি এসব স্মার্টওয়াচ থেকেই ব্রাউজ, ইমেজ দেখা, কল করা ও রিসিভ করা, সব সুবিধাই পাবেন।
সাশ্রয়ী মূল্যেও স্টাইল
বাজারে লাক্সারি ওয়াচ কিংবা ভালোমানের ঘড়ির দাম অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। অথচ বিভিন্ন দামের স্মার্টওয়াচ থাকে মোটামুটি অনেকেরই সাধ্যের আওতায়। ৩ হাজার বাজেটে চাইলেই বেশ ভালো মানের একটি স্মার্টওয়াচ কিনতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এসব স্মার্টওয়াচের জন্যে আপনাকে স্টাইল বিসর্জন দিতে হবে না। প্রায় সব স্মার্টওয়াচ মেনুফ্যাকচারারই আকর্ষণীয় ডিজাইনে তৈরি। তবে বাজেট বাড়ালে আরও ফিচারসমৃদ্ধ ওয়াচ পাবেন। আর এসব স্মার্টওয়াচ যেকোনো অনুষ্ঠান কিংবা ইভেন্টে পরে যেতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
মোবাইলের ব্যবহার কমাতে
প্রতিনিয়ত ব্যস্ততায় কিংবা অপ্রয়োজনেই আমাদের মোবাইলফোন ব্যবহার করতেই হয়। কিন্তু মোবাইলফোন ব্যবহার সবসময় করা সম্ভব হয় না। মনে করুন আপনি জিমে ওয়ার্ক আউট করছেন, এসময় কোনো জরুরি কল এলো। সেটা বুঝবেনই বা কিভাবে ফোন হাতে না নিয়ে?
অথবা আপনি বাসের ভিড়ে আটকে আছেন কিংবা রাস্তা পার হচ্ছেন। পকেট থেকে মোবাইল বের করে তা দেখার ঝুট-ঝামেলা অনেক। সেক্ষেত্রে স্মার্টওয়াচ একটি ভালো উপায় হতে পারে। বিভিন্ন দাম অনুযায়ী স্মার্টফোন ফিচার নিয়ে আসে। স্মার্টফোনগুলো মোবাইলফোনের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেওয়া যায়।
এতে আপনার ফোনের নোটিফিকেশন, কললিস্ট, মেসেজ, সামাজিক মাধ্যমের নোটিফিকেশন সবই দেখতে পাবেন। আবার গান শোনার সময় গান বদলাতে হলেও স্মার্টওয়াচ দিয়েই করতে পারবেন সহজে। আপনার মোবাইলফোনের ব্যবহার কিছুটা হলেও কমবে।
পথ খুঁজুন সহজে
অধিকাংশ স্মার্টওয়াচেই বর্তমানে জিপিএস ট্র্যাকার থাকে। ফলে স্মার্টওয়াচ থেকেই এখন সহজে অচেনা পথকে চেনা বানিয়ে নিতে পারবেন। সেজন্যে আর ঘন ঘন ফোন বের করে গুগল ম্যাপ দেখতে হবে না। শুধু স্মার্টওয়াচে সোয়াইপ আর টাচ করলেই হয়ে যাচ্ছে।
ফোন খুঁজে পান সহজে
হঠাৎ করেই ফোন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে আপনি চারপাশে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সেক্ষেত্রে স্মার্টওয়াচ কাজে আসে। ফোনের সঙ্গে স্মার্টওয়াচ সংযুক্ত থাকলে ‘Find My Phone’ ফিচারের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডেই খুঁজে বের করুন আপনার মোবাইল। এভাবে অন্তত চুরি যাওয়া ফোনটির অনুসন্ধানেও আপনার সুবিধা হবে।
আপনার পার্সোনাল এসিসট্যান্ট
স্মার্টওয়াচ আপনার পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট হয়ে উঠতে পারে। এই গ্যাজেটকে কেন্দ্র করেই আপনি সহজে রুটিন তৈরি করে নিতে পারবেন। যাদের উদ্দেশ্য ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, তারা ফিটনেস ট্র্যাকারের তথ্য দেখে খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার অভ্যাসে রদবদল করতে পারেন।
মজার বিষয় হলো, আজকাল এসব গ্যাজেটে স্লিপ মনিটর থাকে। ফলে আপনি কতটুকু সময় ঘুমে ব্যয় করেছেন, তা ঠিকই জানতে পারবেন। কোনোদিন ঘুমের ব্যত্যয় হলে আপনার ঘড়িই জানিয়ে দেবে আপনাকে। এছাড়া আপনার গুরুত্বপূর্ণ সব নোটিফিকেশন, কল ও গান শোনার নিয়ন্ত্রণেও স্মার্টওয়াচ কার্যকর।
বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে