দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে মোট সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ বলে দাবি করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বুধবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর দেশে বর্তমান মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। সে হিসেবে দেশের ৪ কোটি ১৯ লাখের বেশি মানুষ এখনো নিরক্ষর।মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবারের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সাক্ষরতায় শিখন ক্ষেত্রের প্রসার’। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহযোগিতায় দেশব্যাপি সাক্ষরতা দিবস পালন করা হবে।তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে কারণে সাক্ষরাতার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু এখনো প্রায় ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ নিরক্ষর। তাদের সাক্ষর করতে না পারলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।তিনি বলেন, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশে নিরক্ষর মানুষ থাকবে না। এজন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে নিরক্ষর মানুষ রাখা হবে না। সাক্ষরতার কোনো বিকল্প নেই।জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এখানো ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সাক্ষরতার বাইরে। তাদের সাক্ষরতার আওতায় আনতে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত ২৪৮টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বয়সী ৪৪ লাখ ৬০ হাজার নিরক্ষরকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে মৌলিক সাক্ষরতা জ্ঞান দেয়া হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই এ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সাক্ষরতার হারের দিক দিয়ে ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। এ বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ বিভাগ। এ বিভাগে সাক্ষরতার হার ৬৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ সাক্ষরতার হার নিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বরিশাল বিভাগ।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জনশুমারি ও গৃহগণনায় এ চিত্র উঠে এসেছে। গত ১১ বছরে সাক্ষরতার হার অনেকটাই বেড়েছে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে দেশের মোট সাক্ষরতার হার ছিলো ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
যা বেড়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে মোট (পুরুষ ও মহিলা) সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যা পল্লী এলাকায় ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৮২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মোট (পুরুষ ও মহিলা) সাক্ষরতার সর্বোচ্চ হার ঢাকা বিভাগে ৭৮ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন হার ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭ দশমিক ০৯ শতাংশ।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মোট (পুরুষ ও মহিলা) সাক্ষাতার হার ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ৫৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে সর্বনিম্ন ৪৫ দশমিক ০১ শতাংশ সাক্ষরতার হার ছিলো।বিভাগওয়ারী ফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৮ দশমিক ০৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ০২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে সাক্ষরতার হার ৬৭ দশমিক ০৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭১ দশমিক ৯১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে সাক্ষরতার হার দশমিক ৭০ শতাংশ ৭৫ এবং সিলেট বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ