বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দুই দেশ কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা সই করেছে। বৈঠক শেষে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। তবে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি নরেন্দ্র মোদি।
বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে অভিন্ন নদী পানি বণ্টনের কথা উল্লেখ করলেও তিস্তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি মোদি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। যুগের পর যুগ এ নদীগুলো এখানকার মানুষের জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ নদীগুলো নিয়ে গল্প, লোকগীতি আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতিরও সাক্ষী।
আজ আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে একটি সমঝোতা করেছি। এতে ভারতের দক্ষিণ আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল উপকৃত হবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়াতে আমরা আলোচনা করেছি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে পানিপ্রবাহের রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করে আসছে। বৈঠকে আমরা তথ্য বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছি।
বৈঠক শেষে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে দুই দেশ অনেক অনিষ্পন্ন বিষয় সমাধান করেছে। আমরা আশা করি, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিসহ বাকি সব অমীমাংসিত বিষয় দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ যে আমরা কুশিয়ারা নদীর সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি।
বাকি সব অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধান করতে পারব বলে আমি আশাবাদী। আমি জানি, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবে।তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ইতোমধ্যে অনেক বিষয়ে আমরা আলোচনা করে সমাধান করতে পেরেছি। প্রতিবেশীদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়, সেই দৃষ্টান্ত আমরা দেখিয়েছি।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে জেআরসি অনুষ্ঠিত হওয়া এবং দিল্লিতে মমতার সঙ্গে মোদির বৈঠকটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছিল ঢাকা। ধারণা করা হচ্ছিল, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তি করে তা আওয়ামীল লীগ সরকারের ঝুলিতে দেবে ভারত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দিল্লির আমন্ত্রণ পাননি মমতা।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে চুক্তি হয়নি। আর এরপর থেকে ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা হচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের সফরে কী কী চুক্তি বা সমঝোতা হবে, তা আগেই ঠিক করা থাকে। এক যুগ পর অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে গত ২৫ আগস্ট দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটিকেই ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছে ঢাকা। দীর্ঘদিন ধরে বৈঠকে যোগ দেয়নি ভারত।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে