আমেরিকাবিশ্ব সংবাদ

আস্থার অভাব ও জনসাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কারণে সুনাকের পরাজয়

বরিস জনসনের পদত্যাগের পরই সুনাকের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তবে স্ত্রীর অঢেল সম্পদ নিয়ে বিতর্ক, বিলাসবহুল জীবনযাপন, অর্থ বিভাগের অবস্থা, করনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাকের ভাবমূর্তি নিয়ে বিতর্কও চলে।আর তাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে হেরে গেলেন ঋষি সুনাক।

এমন আভাস অবশ্য আগেই পাওয়া গিয়েছিল। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন ঋষি সুনাক।বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গিয়েছিল, সুনাকের চেয়ে লিজ ট্রাস বেশি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই সঙ্গে টোরি সদস্যদের কাছেও পছন্দের ছিলেন ট্রাস।

কনজারভেটিভ দলের জরিপ বলছে, ২৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ট্রাস ৬৯ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন। আর ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ট্রাস ৬৬ শতাংশে এগিয়ে ছিলেন।মিন্টের এক প্রতিবেদনে সুনাকের পরাজয়ের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

বরিস জনসনের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সুনাক একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। আর সেটির শিরোনাম ছিল ‘ঋষির জন্য প্রস্তুত হও’। এটি প্রাথমিকভাবে তাঁকে সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু এই ভিডিওর কারণে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, বরিস জনসনকে সরানোর পেছনে সুনাকেরই বেশি ভূমিকা ছিল।

সুনাকের একটি ভিডিও হঠাৎ সামনে আসে। তাতে সুনাক অনুন্নত শহরাঞ্চলের বরাদ্দ করা অর্থ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। বঞ্চিত নগর এলাকা থেকে কেন্ট কমিউটার বেল্টে অর্থ স্থানান্তর করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেওয়া সুনাকের বক্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। যুক্তরাজ্য সরকার দক্ষিণ-পূর্ব ব্রিটেনের বাইরে সম্পদের সুষম বণ্টনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ঋষি সুনাকের এ ধরনের পদক্ষেপে সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মনে অনাস্থা তৈরি হয় ।

নিজের দলের ভেতরে প্রথম দিকে সুনাকের প্রতি অনেক বেশি সমর্থন ছিল। তবে পরে সাজিদ জাভিদ, নাদিম জাহাওয়ি ও মরডন্টের সমর্থন হারান সুনাক। অন্য এমপিরাও সুনাকের প্রতি সমর্থন তুলে নেন। অন্যদিকে, লিজের প্রতি সমর্থন বাড়তেই থাকে।

দ্য গার্ডিয়ানে লেখা এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যদিও দীর্ঘদিন ধরে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুনাকের নাম শোনা যাচ্ছিল, তবু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ ট্রাস ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী।

বরিস জনসনের পদত্যাগের পরই সুনাকের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তবে স্ত্রীর অঢেল সম্পদ নিয়ে বিতর্ক, বিলাসবহুল জীবনযাপন, অর্থ বিভাগের অবস্থা, করনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাকের ভাবমূর্তি নিয়ে বিতর্কও চলে।

ইউগভের জরিপ বলছে, করনীতি ও অর্থ বিভাগের অবস্থা, আস্থার অভাব ও জনসাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কারণে সুনাকের প্রতি অনেকের সমর্থন কমেছে।

সুনাকের জনপ্রিয়তায় আরও ভাটা পড়ে সানডে টাইমস রিচ লিস্ট ম্যাগাজিনে খবর প্রকাশের পর। সেখানে ধনীদের তালিকা অনুসারে সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সম্পদ ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের চেয়ে বেশি বলে প্রকাশিত হয়। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪৩ কোটি ডলার। ওয়েস্টমিনস্টারের প্রথম কোটিপতি দম্পতি হিসেবে তাঁদের নাম আসে। লেবার পার্টি ব্যবসার জন্য সুনাককে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতার দাবি তোলে।

গার্ডিয়ানের খবর বলছে, সুনাক এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভারতের বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইনফোসিসের ৬৯ কোটি মূল্যের শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি।

ওই পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়, অক্ষতা ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা হিসেবে কর দিত বাধ্য ছিলেন না। এ কারণে তিনি ইনফোসিসে শেয়ারের লাভ থেকে প্রায় দুই কোটি পাউন্ড কর বাঁচান। সমালোচকেরা বলেছেন, সুনাকের স্ত্রী কর ফাঁকি দিচ্ছেন। অথচ তিনি দরিদ্রদের কাছ থেকেও কর আদায় করছেন।

আরও বিপদ বাড়ে, যখন জানা যায় সুনাক যুক্তরাজ্যে ফেরার পরও যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড রেখেছিলেন। এ কারণে কনজারভেটিভ পার্টিতে তাঁকে নিয়ে একধরনের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়।সুনাকের দামি জামাকাপড় ও বিলাসবহুল বাড়ির জন্য সমালোচকেরা তাঁকে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন।

সুনাক ভবিষ্যতে কনজারভেটিভ পার্রটি নেতা হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, ‘সবে আমরা নির্বাচনী প্রচার শেষ করেছি। আমাদের পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।’সুনাক আরও বলেন, কে জিতেছে কে হেরেছে, তার চেয়েও বড় কথা, এবারের নির্বাচন অনুপ্রেরণামূলক হয়েছে। কারণ, অধিকার আদায় ও বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদের কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে একধরনের আশাবাদ সৃষ্টি হয়।

নির্বাচনে পরাজয়ের কিছুক্ষণ পরই সুনাক জয়ী প্রার্থী লিজ ট্রাসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। টুইটে সুনাক বলেছেন, ‘এখন আমাদের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পাশে থাকতে হবে। কারণ, তাঁকে কঠিন সময়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে।’

সুনাক আরও বলেন, ইয়র্কশায়ারে রিচমন্ড এলাকায় এমপি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, রিচমন্ডের জনগণ তাঁকে যত দিন চাইবেন, তত দিন তিনি তাঁদের পাশে থাকবেন।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Back to top button