প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক ভোট চায়। তবে কাউকে ধরে–বেঁধে নির্বাচনে আনবে না ইসি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইসির পক্ষ থেকে সবার প্রতি আহ্বান থাকবে।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপি দেশের অন্যতম প্রধান দল। তারা যেটা চাচ্ছে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো রকম বাধা নেই। তাদের রাজনৈতিক কৌশলে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা কাউকে ধরে-বেঁধে নির্বাচনে আনবো না। সোমবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আমরা সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। কারণ, সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। সারাবিশ্বে দলগুলোই এই ভারসাম্য সৃষ্টি করে। সকল দলের প্রতি আন্তরিকভাবে উদাত্ত আহ্বান থাকবে আপনারা আসেন, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখেন ও সহায়তা করেন। আমরা কাউকে ধরে-বেঁধে নির্বাচনে আনবো না।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে নির্বাচনের মাঠে ভারসাম্য তৈরি হয়। বিএনপি অংশ নিলে নির্বাচন আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে। বিএনপির যদি কোনো রাজনৈতিক কৌশল থাকে, সে বিষয়ে ইসির হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই।
তিনি বলেন, আজকে দু’টো দলের সঙ্গে সংলাপ হলো। সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাতে সহায়ক হয় সেজন্যই সংলাপ করেছি। সংলাপ করে আমরা লিখিত আকারে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি তাদের। ইভিএম নিয়েও বৈঠক করেছি। ইভিএম নিয়েও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।
আমরা আমাদের নিজস্ব বিবেচনায় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ৩০০, ১০০, ১০ বা ২০টা নয়, আমরা একটা যৌক্তিকভাবে ব্যালট পেপারে ১৫০ আসন ও ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের লিখিত বক্তব্য আছে। সেগুলোও পর্যালোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই মেশিনের প্রতি অনেকে বিশ্বাস করেন, অনেকে করেন না। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি-না সেটা নির্ভর করবে এটা পাওয়া যাবে কিনা, তার ওপর। কারণ, এটার বেশিরভাগ পার্টস আসবে বিদেশ থেকে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা শুধু দলকে নয়, সরকারকেও সংলাপ থেকে আসা মতামত জানিয়েছি। কেননা, দলগুলো কী বলছে তা সরকারেরও জানা উচিত। সরকার কিন্তু কোনো দলের নয়। সেই বিভাজনটাকে মাথায় রেখে আমরা সরকারকে জানিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধী দলগুলো। সেটা আমরা দলগুলোকে জানিয়েছি। ভোটার তালিকা আগামী বছর মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করবো। রোডম্যাপ সপ্তাহ দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করতে পারবো। ইভিএম নিয়ে আমরা খুব খুঁটিনাটি কাজ করছি। ইভিএমের মধ্যে ওই ধরনের কারচুপি, এইটা সেইটা এবং কার্ডের মাধ্যমে কী সম্ভব, আমরা তা খতিয়ে দেখেছি। কারচুপির বিষয় কিন্তু পাইনি। ব্যক্তি শনাক্তকরণের পর আঙ্গুলের ছাপ দিলেই ছবি ভেসে আসবে। এরপর ব্যালট ওপেন হবে। ৪০ সেকেন্ড থাকবে। এর মধ্যেই ভোট দিতে হবে।
সিইসি বলেন, ইভিএমে ভোট নেয়ার ক্ষেত্রে একটা অসুবিধা কেউ কেউ লক্ষ্য করেছেন, যে একজন লোক বুথে যদি দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি যদি ভোটারকে বলেন- আপনি যান, ভোটটা আমি দিয়ে দেবো। সেই সংকটটা আমাদের মাথায় আছে। এজন্য আমরা সিসি ক্যামেরা দেবো।
আমরা কিন্তু কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করবো প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ওপর। কেউ যদি বৈধ বা অবৈধভাবে ভোট বাধাগ্রস্ত করে, তবে তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধ করে ওই লোককে বের করে দেবেন। তিনি না পারলে পুলিশ ডেকে বের করে দেবেন। তিনিও পারলেন না, পুলিশও পারলেন না, তাহলে ভোট বন্ধ করে দেবেন। এছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি মাস্তানকে যদি অ্যালাউ করেন, তবে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নতুন প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। এটা আমাদের প্ল্যান। প্রকল্প যদি বাস্তবায়ন করতে না পারি তবে ব্যালটে নির্বাচন করবো।
ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্রসহ চার মন্ত্রণালয় নেয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর ইসির কর্তৃত্ব আছে। এতোদিন হয়তো প্রয়োগ করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করার বিষয়টি এটা ইসির অধীনে হতে পারে না। এটা সংবিধানে বলা আছে। কাজেই আপিন যদি চান আমরা মন্ত্রী হবো, এটা সংবিধান অ্যালাউ করবে না। যে ক্ষমতা আছে সেটাই প্রয়োগ করলে আমরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারি।
সিইসি বলেন, ‘অনেকের সন্দেহ-অবিশ্বাস থাকতে পারে। তবে ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন কমফোর্টেবল (চিন্তামুক্ত)। নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটি সম্ভব হবে কি না, তা নির্ভর করবে ইভিএম সংগ্রহের ওপর। কারণ, এই মেশিনের যন্ত্রাংশ আসবে বিদেশ থেকে।’
বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ