প্রতিবার নিরাশার সঙ্গে দেখেছি প্রধানমন্ত্রী ভারতকে দিয়েই এসেছেন কিছুই আনেননি
আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয় এক স্মরণসভা।ঐ স্মরণসভায় এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেন, ‘ভারত সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দিয়ে এসেছেন, কিছুই আনতে পারেননি।’
অনুষ্ঠানে এম সাইফুর রহমানের স্মৃতিচারণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করতেন। দেশের জন্য যা ভালো, সেটি করতে যা করার তিনি করতেন। তিনি একজন দক্ষ হিসাববিদ ছিলেন।সাইফুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হতাশার। আমরা প্রতিবার আশা করছি, এবার প্রধানমন্ত্রী কিছু নিয়ে আসবেন। প্রতিবার তিনি অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে দিয়ে এসেছেন, নিয়ে আসেননি। সুতরাং ওই একটাই কমেন্ট (মন্তব্য), আগে আসুক তিনি ঘুরে। কী নিয়ে আসছেন, আমরা দেখি। তারপর মন্তব্য করা যাবে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন নয়, চুরি করা। রিজার্ভের সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের সমস্য—সবকিছুর মূল সমস্যা চুরি বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭৫ সালে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল তার পূর্বে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সেটা ছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। যারা (আওয়ামী লীগ) সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাস করত না তারা বললেন আমরা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করব। তারপরে যেটা হলো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কোনো কাঠামোই তৈরি হলো না। যেটা তৈরি হলো সেটা হলো লুটপাটের অর্থনীতি। ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ছিল সম্পূর্ণ লুটপাটের অর্থনীতি।
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, যে কাজ ১০ হাজার টাকায় হবে, সে কাজে লাগে ৫০ হাজার টাকা। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় অসম্ভব রকমের ব্যয় হচ্ছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কী কারণে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তার জবাবদিহি এখনো সরকার দিতে পারেনি।
রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, সেতু নির্মাণ হচ্ছে; যে সেতুটা এক বছরে নির্মাণ করা সম্ভব সেটা করছে ১০-১৫ বছরে। ঢাকা থেকে টঙ্গীর যে রাস্তা সেটা আজ ১০ বছর ধরে হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আজকে অত্যন্ত কঠিন একটি সময় অতিক্রম করছি। এ সময় সাইফুর রহমান থাকলে আমাদের রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতেন। এই সরকারের যে মূল চেহারা সেটাকেও উন্মোচনে তিনি সক্ষম হতেন।
রিজার্ভ-জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, যে কাজটা দশ হাজার টাকায় হবে সেটা তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করছে। বাকি চল্লিশ হাজার টাকা তারা (সরকার) নিজেরা ভাগ করে চুরি করে খাচ্ছে।
সাইফুর রহমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সাইফুর রহমান পড়াশোনা করেছিলেন হিসাববিজ্ঞানের ওপর। সে কারণেই কোনটা করলে লাভ হবে আর কোনটা করলে লাভ হবে না, আর কোনটা করলে ঋণগ্রস্ত হবো আর কোনটা করলে অনেক বেশি লাভবান হব সেটা তিনি খুব ভালো করে জানতেন। সেই কারণে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যে কাজটা দেশের জন্য ভালো মনে করতেন তিনি সেটাই করতেন। আর সেই কাজটা করার জন্য যা যা করা দরকার ছিল তিনি তাই করতেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাইফুর রহমান শুধু রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে তারা ইভিএমের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নেতাদের লুট করা আর লুট করে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা, ধনী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। সাইফুর রহমান ইচ্ছে করলে এই সুযোগ করে দিতে পারতেন কিন্তু একটি লোকেরও এই সুযোগ করে দেননি। কেন দেননি দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের দেশ ও জাতির অধঃপতন হয়েছে; এই লুটেরা সরকার থেকে, ভোট ডাকাত সরকার থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে, দেশের কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকারকে হটাতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা আজকে অর্থনীতিকে লুটপাট করে দেউলিয়া করে ফেলেছে সাইফুর রহমান বেঁচে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করব।
স্মরণসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা নাজিমুদ্দিন আলম ও কামরুজ্জামান রতন বক্তব্য দেন।
বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ