ক্যাফেটেরিয়ায় তালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও রড নিয়ে পক্ষ দুটির প্রায় দুই ঘণ্টার মহড়ায় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।সংঘর্ষকালে গুলি বিনিময় ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক সাংবাদিক ছাড়াও দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাওয়ার পর টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছিলেন উত্তর ছাত্রাবাসের ছাত্র ও কলেজ কমিটির সাবেক নেতা আমিনুর রহমানের অনুসারী শাহরিয়ার হাসনাত ওরফে জিয়নসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
টাকা দেওয়া নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। কিছুক্ষণ পর ব্যবস্থাপককে উত্তর ছাত্রাবাসের কাছে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং ক্যাফেটেরিয়ার দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন শাহরিয়ার হাসনাত ও তাঁর সহযোগীরা।
শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা কলেজের উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাধে। দুই ঘণ্টা ধরে চলে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে কলেজ প্রশাসন, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরে সেখানে যান দক্ষিণ ব্লকের (দক্ষিণ দিকের তিনটি হল) নেতা মিঠুন শেখের একদল অনুসারী। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন কাউসার হাসান ওরফে সাদা কাউসার। তাঁরা শাহরিয়ারের মাথা ফাটিয়ে দেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ব্লকের (উত্তর পাশের পাঁচটি হল) ছাত্রলীগকর্মীদের সঙ্গে দক্ষিণ ব্লকের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ক্যান্টিনের খাবার নিয়ে একজনের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় আজ (শনিবার) দক্ষিণ ব্লকের এক শিক্ষার্থীকে নর্থ ব্লকের শিক্ষার্থীরা মারধর করে।
পরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে গুলি বিনিময় হয়নি। শুনেছি, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। সংঘর্ষের বিষয়ে নেতা-কর্মীদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফুয়াদ হাসান বলেন, সংঘর্ষ হয়েছে। বিস্তারিত তাঁর জানা নেই।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার জেরে দুদিন ধরেই ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শনিবার রাতে দক্ষিণ ছাত্রাবাসের আল আমিন নামের এক ছাত্রলীগকর্মীকে মারধর করেন উত্তর ব্লকের কিছু ছাত্রলীগকর্মী। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দক্ষিণ ব্লকের কর্মীরা লাঠিসোঁটা, রড, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বের হন।
পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বের হন উত্তর ব্লকের কর্মীরাও। এ সময় দুই ব্লক থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মূলত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সে সময় কলেজশিক্ষকেরা ঘটনাস্থলের পাশে ও পুলিশ সদস্যরা ক্যাম্পাসের সামনে উপস্থিতি ছিলেন।
সংঘর্ষে উত্তর ও দক্ষিণ ব্লকের ছাত্রলীগকর্মী আল আমিন, শাকিল, জুয়েল, অন্তু, মাহবুবসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক ফরহাদ বিন নূরও।
এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনার (সংঘর্ষ) বিষয়ে তদন্ত করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে