নারায়ণগঞ্জের ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করতে আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডঃ হানিফ
‘দেশে আবার লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে’, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ‘বিএনপি নেতারা বলছেন- নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে, তার শরীরে গুলির চিহ্ন নেই। বরং তার শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন আছে। এ ঘটনা নতুন করে সন্দেহের তৈরি করেছে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষেধ করছেন। জনগণ আতঙ্কিত হয় আপনারা (বিএনপি) এমন কাজ করবেন, আন্দোলনের নামে হাতে লোহার রড নিয়ে তাণ্ডব করবেন, এসব বরদাশত করা হবে না। কারণ, জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব।’
আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর পূবালী ব্যাংক অডিটোরিয়ামে পূবালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় হানিফ নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করতে কোনো আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড কি না, এমন প্রশ্ন রেখে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানান।
‘সহিংসতা করলে পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করতে চাচ্ছে। এগুলো করে পার পাওয়া যাবে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক তারেক পালিয়ে থেকে রেহেই পাবে না। দেশে যখনই আসবে তাকে শাস্তি পেতে হবে।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত ১৩ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ পৃথিবীতে নতুন পরিচিতি লাভ করেছে। যে দেশ একসময় ব্যর্থ রাষ্ট্র, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের দেশ হিসেবে চিহ্নিত ছিল সেই দেশকে নতুন পরিচয় এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে।’
হানিফ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া পাপের শাস্তি পাচ্ছেন। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আল্লাহ বলেছেন, পাপ করলে ইহকাল ও পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হয়। আর তার বড় প্রমাণ খালেদা জিয়া। উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, উনি কেন জেলখানায় থাকবেন? ক্ষমতায় থাকতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছেন। উনার নির্দেশে নিরীহ, নিরপরাধ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। গ্যাটকো-নাইকো মামলায় অনেক তথ্য প্রমাণ আছে। আমি জানি না, উনার বাকি জীবন কোথায় কাটবে?’
‘দেশের দুই কেটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শেখ হাসিনা কাজ করছেন’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের আগে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনায় কাজ করছেন তিনি। সাড়ে ১৬ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। ১০০টি অথনৈতিক অঞ্চল তৈরির মাধ্যমে শিল্প খাতে জাগরণ সৃষ্টি করছেন। মিরসরাইয়ে ৩৫ হাজার একর জমি নিয়ে শিল্পপার্ক হয়েছে। এতে এক কোটি যুবকের কর্মসংস্থান হবে। ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও ১৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির টার্গেট নিয়ে এসব করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে আজ বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশ হতে পারতো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীরা জনগণের ভাগ্যের কথা চিন্তা করেনি। তারা নিজেদের ভোগ বিলাসের চিন্তায় ছিল। দুভার্গ্য আমাদের দেশের কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করেছে। আর এর নেপথ্যে ছিলো জিয়াউর রহমান।’
‘বিএনপি কার স্বার্থে সরকারের পতন চায়?’ এমন প্রশ্ন রেখে হানিফ বলেন, ‘আপনারা কার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনা করবেন তা আগে পরিষ্কার করুন।’পূবালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ ছানাউল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ।
‘বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন এমন ইতিহাস নেই’, উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘জিয়া পাকিস্তানের আদর্শকে মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। তার সকল শ্রদ্ধা, টান ও ভালোবাসা ছিল পাকিস্তানের জন্য। তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তা তার কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হয়।’
‘বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্টি একই জায়গায়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের মাওলানা মওদুদী জামায়াত সৃষ্টি করেছেন। আর বিএনপি পাকিস্তাস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তৈরি। এ দুটি দল দেশের উন্নয়ন চায় না। পাকিস্তানের এ দুই সন্তান বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে থাকুক তা চায় না। তারা পাকিস্তানের আদর্শ ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছে।’
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে