আওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

বিএনপিকে আর পুরো শক্তি নিয়ে আন্দোলনে নামতে দেবে না সরকার

বিএনপিকে আর পুরো শক্তি নিয়ে আন্দোলনে নামতে দেবে না সরকার। বিএনপি নামতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে তা দমনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

এ বছরের শুরু থেকে বিএনপি কিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এসব কর্মসূচি ছিল বাধাহীন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু গত আগস্টের শেষের দিক থেকে বিএনপির কর্মসূচির ওপর মারমুখী হয়ে ওঠে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপির কর্মসূচির ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরপরই গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচিতেও একইভাবে পুলিশ মারমুখী অবস্থানে থাকবে। সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও চড়াও হবেন বিএনপির ওপর।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিএনপিকে চাপ দিতে শুরু করে। কেন বিরোধী দলের কর্মসূচি বাধাহীনভাবে করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? হঠাৎ করে কেন সরকার নিজের অবস্থান থেকে সরে এল? এসব প্রশ্নের একক উত্তর নেই আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে। এ বিষয়ে দলের পাঁচজন দায়িত্বশীল নেতা এবং মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি কারণ জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সোমবার ভারতে গুরুত্বপূর্ণ সফরে যাচ্ছেন। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২২ আগস্ট থেকে টানা ১০ দিন বিএনপির কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তারা গত ২৯ আগস্ট আবার ঘোষণা দেয়, ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি চলবে।

এই সময়েই প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে থাকছেন। বিএনপির এই কর্মসূচির পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছে সরকার। বিশেষ করে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি হয়তো আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে দেশে দলটির জনসমর্থন ব্যাপক। এ জন্য সরকার তাদের বিষয়ে সতর্ক।

সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, কিছুদিন সুযোগ দেওয়ার পর বিএনপি বড় বড় সমাবেশ করতে শুরু করেছে। ঢাকার মতো মফস্বল শহরেও বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি সারা দেশে দলকে সংগঠিত করে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও বিএনপির কর্মসূচিতে মানুষের সমাগম বাড়ছে বলে জানানো হয়।

এ ছাড়া বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এমন ভাবনা জন্মাতে শুরু করেছে যে পুলিশ নীরব থাকলে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না। এতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে মনে হয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। এ জন্য বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচিতে রাশ টেনে ধরার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি তো কর্মসূচির নামে পুলিশের ওপর হামলা শুরু করেছে। নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ তো দিতে পারে না সরকার। অনেক স্থানে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি যদি বিপুল মানুষ নামিয়ে শোডাউন না করত, হয়তো আরও কিছুদিন তাদের বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হতো। কিন্তু তারা মাঠে নিজেদের প্রধান শক্তি হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করেছে। এ অবস্থায় বিএনপি দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে—এই অভিযোগ তুলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ মে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিরোধীদের সভা-সমাবেশে বাধা না দেওয়ার ইঙ্গিত দেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, বিরোধী দলগুলো তাদের মিছিল-মিটিং-সমাবেশগুলো স্বাধীনভাবে করুক। এরপর ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের এক কর্মসূচিতে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, বিএনপি যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়, তাতেও বাধা দেওয়া হবে না।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহতের প্রতিবাদে ২২ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ১১ দিনে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৩৭টি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ১৪টি স্থানে বিএনপির নেতাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে বৃহস্পতিবার গুলিতে যুবদলের এক কর্মী নিহত হন।

১৪ আগস্ট গণভবনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকেও বিরোধীদের বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, বিরোধীদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। এর মধ্যে বিএনপি ১১ আগস্ট ঢাকায় বড় সমাবেশ করে। দলটির ঢাকার বাইরে কর্মসূচিতেও লোকসমাগম দেখায়। এরপরই ঢাকার বাইরের কর্মসূচিতে প্রথমে আওয়ামী লীগ চড়াও হতে শুরু করে। পুলিশও ছিল মারমুখী ভূমিকায়।

বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (পরিচালন, গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা) মো. হায়দার আলীর খান বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করার কিছু নেই। আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে বাধ্য হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, মে মাসের শুরুতে বিরোধীদের কর্মসূচি পালনে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে তাদের ওপর নির্দেশনা ছিল। ভোলায় দুজনের প্রাণহানির বিষয়টি কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে দুই দিন ধরে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে হচ্ছে। ওই সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর এমন নির্দেশনা যে প্রথমে সতর্ক করতে হবে। এরপর প্রয়োজনে গুলি চালাতে হবে। অর্থাৎ মাঠে নামার সাহস যেন কেউ না দেখায়, সেটাই নির্দেশনা।

বিএনপিকে কেন কিছুদিনের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছিল—এই নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সূত্রগুলোর মধ্যে আরও কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি অল্প কিছু ঘরোয়া সভা-সেমিনারের বাইরে কিছু করেনি। এমনকি দলের ব্যানারেও তাদের খুব বেশি কর্মসূচি ছিল না। ফলে বিএনপির বর্তমান শক্তিমত্তা কতটা—তা দেখতে চেয়েছিল সরকার। এ জন্য তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের এক কর্মসূচিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিরোধীদের মোকাবিলা করার কথা জানান। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপির কর্মসূচিতে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

১৮ মন্তব্য

  1. আওয়ামলীগের কেন্দ্রীয় নেতা উচ্চ পর্যায়ে নয় ভারত থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করুন তার পর দেখা যাক বি এন পি সাথে পারেন কিনা।

  2. বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। ইহা একটি সন্ত্রাসী ও অপশক্তির দল,বিএনপি।
    দেশবিরোধী সকল অপশক্তির সমষ্টির নাম বিএনপি।
    সংবিধান বিরুধী,স্বাধীনতা বিরধী সন্রাসী
    এই দলকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হউক।

  3. বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। ইহা একটি সন্ত্রাসী ও অপশক্তির দল,বিএনপি।
    দেশবিরোধী সকল অপশক্তির সমষ্টির নাম বিএনপি।
    সংবিধান বিরুধী,স্বাধীনতা বিরধী সন্রাসী
    এই দলকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হউক।

Back to top button