সাভারে কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে আটকা ব্রাহমা গরু
২০২১ সালের ৫ জুলাই সাদেক অ্যাগ্রো ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করে। ঢাকা কাস্টম হাউস তা জব্দ করে সাভারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখে। গরুগুলো এখনো সেখানেই আছে।
দেশে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি, পালন ও প্রজনন নিষিদ্ধ জেনেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি ওজনের ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদেক অ্যাগ্রো। ওই সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউস গরুগুলো জব্দ করে। এ ঘটনার ১৪ মাস পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জব্দ ১৮টি গরুর ২টি মারা গেছে। আর একটি গাভি একটি বকনা বাচ্চা দিয়েছে।
২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একটি আদেশ জারি করেছিল। এতে বলা হয়, ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রেগুলেটরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গবাদিপশু আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনাপত্তি গ্রহণ করে তা করতে হবে।
বেসরকারি পর্যায়ে গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনার সংশোধিত নীতিমালা ২০১৬–এর আওতায় দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ব্রাহমা আমদানি, প্রজনন ও লালনপালন নিষিদ্ধ রয়েছে। ব্রাহমা জাতের গরু বেশি মাংস দেয়, দুধ দেয় খুব কম। এ জাতের গরু দেশে ছড়িয়ে গেলে দুধ উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ যুক্তিতে ব্রাহমা বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি, পালন ও প্রজনন নিষিদ্ধ করে রেখেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করেছিল ডেইরি সান প্রাইভেট লিমিটেড। তারা হলস্টিন ফ্রিজিয়ান গরুর অনুমতি নিয়ে ব্রাহমা গরু আমদানি করে। সেগুলোও জব্দ করেছিল ঢাকা কাস্টম হাউস।
আমদানিকারক বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে যান। ঘটনার ২৩ দিন পর ওই বছরের ৭ মার্চ উচ্চ আদালত ‘আমদানি নিষিদ্ধ নয়’ বলে আদেশ দেন। পরে পণ্য চালানটি বাজেয়াপ্ত করার বদলে ৩৫ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা আদায় করে তা খালাস করে দেয় ঢাকার কাস্টম হাউস। আর এর প্রায় ৪ মাস পর ১৮টি গরু আমদানি করে সাদেক অ্যাগ্রো।
সাদেক অ্যাগ্রোর আমদানি করা ১৮টি গরু জব্দ করার পর ১টি মামলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ মামলার একটি রায় সরকারের পক্ষে এসেছে বা আমদানিকারক সাদেক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে গেছে। তবে সেই রায়ের পর আমদানিকারক আপিল করেছেন। আপিল আবেদন এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, ‘একটি চালান ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেও আরেকটি আটকে দিয়েছি। সেটি এখনো নিতে পারেনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, আপিলের রায় আমদানিকারকের পক্ষে গেলে তাঁরা গরুগুলো নিয়ে যাবেন। আর তাঁদের বিপক্ষে গেলে গরুগুলো মাংস আকারে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে, আবার সংরক্ষণও করা হতে পারে। তবে যা হবে, তা আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।
কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ১৮টি ব্রাহমার মধ্যে ১টি উড়োজাহাজ থেকে নামানোর পর মৃত পাওয়া যায়। এরপর সাভারের খামারে আনার প্রায় তিন মাস পর একটি ষাঁড় মারা যায়। এখন জীবিত ১৬টি ব্রাহমার মধ্যে ৯টি গাভি ও ৭টি ষাঁড়। এ ছাড়া একটি গাভি একটি বকনা বাচ্চা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে বকনাসহ ব্রাহমা জাতের ১৭টি গরু আলাদা করে রাখা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খামারের সব গরুর জন্য বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তারপরও ব্রাহমা গরুগুলোর জন্য বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গরুগুলোর অনেক ওজন হওয়ায় নিচে রবার প্যাড দিয়ে আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাওয়ার জন্য গরুগুলোকে প্রতিদিন দানাদার খাবার ও ঘাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া এই গরুগুলো দেখভালের জন্য প্রতিদিন তিন শিফটে তিনজন কাজ করেন বলেও তিনি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে দেশে মাংস উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি খোলার জন্য ব্রাহমা গরুগুলো আমদানি করেছিল সাদেক অ্যাগ্রো। যৌথ কোম্পানি খোলার আগে ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ও স্থানীয় খাদ্যে লালনপালন করলে কেমন লাভজনক হবে, তা দেখার জন্য গরুগুলো আনা হয়েছিল। তবে গরুগুলো বিনিয়োগের টাকা সাদেক অ্যাগ্রোর নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটির বলে দাবি করেছেন ইমরান হোসেন।
বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ