আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে চারটি মোটরসাইকেলে আগুনসহ সাত থেকে আটটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু ছাড়াও পথচারী-নারীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৬ জন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ।
গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী শাওন প্রধান (২০) ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি পার্শ্ববর্তী বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকায়।
শাওনের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তাঁর বড় ভাই ফরহাদ প্রধানসহ স্বজনেরা। লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। ফরহাদ প্রধান বলেন, তাঁর ভাই একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাওন। এরপর তিনি খবর পান তাঁর ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শোভাযাত্রা করতে নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।
সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী শোভাযাত্রা বের করতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাঠিপেটা করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় শহরের ২ নম্বর রেলগেট ও আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের জন্য পুলিশকে দায়ী করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর শত শত রাউন্ড শটগানের গুলি করেছে। এটা খুবই লজ্জাজনক। একটি স্বাধীন দেশে পুলিশ পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনুমতি না নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। জানমালের ক্ষতি এড়াতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। তবে গুলিতে কেউ মারা গেছেন কি না, তা তিনি জানেন না। সংঘর্ষে পুলিশের ১৫ সদস্য আহত হন বলে তিনি দাবি করেন।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ মারমুখী হয়ে তাঁদের লাঠিপেটা করে। পুলিশের লাঠিপেটায় সেদিন আহত হন বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মী।
বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ