ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন ‘হাসপাতালে সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না।
কারণ, যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবারে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর,শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে? আগে তো চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই তো চিকিৎসাসেবার জন্য ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হবে।’
মেয়ররের এ মন্তব্য নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার মধ্যে থাকা তিনটি বড় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান তিনজনই বলেন, হাসপাতালগুলোয় সার্বক্ষণিক চিকিৎসকেরা থাকেন। এ ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। পরিস্থিতি দেখতে হাসপাতালগুলো যেকোনো সময়ে পরিদর্শনের আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
হাসপাতালে চিকিৎসক থাকেন কি না, তা সরেজমিনে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান। তবে তিনি সিটি মেয়র তাপসের বক্তব্য নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘উনি (মেয়র তাপস) সম্মানিত লোক। তাঁর কথা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আপনি এসে দেখে যান, হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে কি না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মধ্যে পড়েছে ঢাকা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। এ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৯০০। কিন্তু এর চেয়ে বেশি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী সব সময় থাকেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রাশিদ উন নবী। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে না, এটা ঠিক নয়। মেয়র মহোদয় কীভাবে বলেছেন, আমি জানি না। তবে কেউ যদি বলেন হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে না, সেই অভিযোগ ঠিক নয়। এখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয়।
ব্রিগেডিয়ার রাশিদ উন নবী জানান, প্রতিদিন এ হাসপাতালে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী ভর্তি হন। আউটডোরে তিন হাজার রোগী সেবা পান। তিনি বলছিলেন, এত রোগী ভর্তি থাকেন। তাঁদের সেবার জন্য তো সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখতেই হয়। এটা সাধারণ বিষয়।
কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের সঙ্গে। হাসপাতালটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ৩০০। ৩৪টি বিভিন্ন বিভাগের ৪২টি ওয়ার্ডের দেশের বৃহত্তম হাসপাতাল এটি। মেয়রের বক্তব্য নিয়ে ব্রিগেডিয়ার নাজমুল হক বলেন, ‘তাঁর মন্তব্য নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। উনি হয়তো কোনো পয়েন্ট থেকে কথা বলেছেন। আমি শুধু বলব, হাসপাতালে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান কতক্ষণ খোলা রাখা যাবে, ২২ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা নির্ধারণ করে দেয় ডিএসসিসি। কাল ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ সময়সীমা কার্যকর হবে। সূচি অনুযায়ী, সব দোকানপাট, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত আটটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁর রান্নাঘর বন্ধ করতে হবে রাত ১০টার মধ্যে। আর খাবার সরবরাহ চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। সাধারণ ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে রাত ১২টার মধ্যে। আর হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে রাত ২টার মধ্যে।
শপিং মল, খাবারের দোকান বা বাজারের বন্ধ হওয়ার সময় নিয়ে কারও তেমন কোনো আপত্তির কথা শোনা যায়নি। কিন্তু ওষুধের দোকানের মতো অতি প্রয়োজনীয় একটি দোকানের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা হয়। একপর্যায়ে ২৫ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের দোকানগুলো (ফার্মেসি) ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে। ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে না, খোলাই থাকবে। কারণ, এটি জরুরি বিষয়। মন্ত্রী এ কথাও বলেন, সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) যদি এ বিষয়ে কিছু বলে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অবশ্যই এর সুরাহা করা হবে।
অসুখ বলে–কয়ে আসে না। এটি ঘড়ির সময়ের সঙ্গে মিলেও আসে না। তাই ওষুধের দোকান নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ রাখতে ডিএসসিসির সিদ্ধান্তকে অমূলক বলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপ্রতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সনাল।
আর হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের পর চিকিৎসক থাকেন না বলে সিটি মেয়র যে কথা বলেছেন, অধ্যাপক ইকবাল আর্সনালের মতে তা ভ্রান্ত। তিনি বলেন, হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এখানে পরিষেবাও সার্বক্ষণিক মেলে। চিকিৎসককে তো থাকতেই হয়। যে যেভাবে বোঝেন, সেভাবে কথা বলেন। এটা বোঝার ভুল।’
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ