শেষ সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানে রাখা ভূমিকার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিশ্বনেতারা। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।
মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিক্যাল হসপিটালকে উদ্ধৃত করে গতকাল মঙ্গলবার দিনের শেষ দিকে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স, তাস ও আরআইএ নভোস্তি বলেছে, মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগে গতকাল সন্ধ্যায় গর্বাচেভ মারা গেছেন।
গর্বাচেভ ১৯৮৫ সালে ৫৪ বছর বয়সে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সময় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। গর্বাচেভ বিশ্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে উন্মুক্ত করে দেন এবং অভ্যন্তরীণ কিছু সংস্কার হাতে নেন।তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙেই আজকের রাশিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে গর্বাচেভের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল। তিনি হাসপাতালে যাওয়া-আসার মধ্যেই ছিলেন। গত জুনে তিনি কিডনির অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি।
শেষ এই সোভিয়েত নেতার মৃত্যুতে বিশ্বনেতারা শোক জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, গর্বাচেভ ‘ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন’। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।
তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার জন্য বহু রুশ গর্বাচেভকে কখনো ক্ষমা করবেন না। সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেনে নিযুক্ত তৎকালীন কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ বলেন, গর্বাচেভ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটিয়েছেন’। তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
গর্বাচেভকে মস্কোর নভোদেভিচি সমাধিক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী রাইসার পাশে সমাহিত করা হবে। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৯৯ সালে মারা যান। এ সমাধিক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রথিতযশা বহু ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বে এই সোভিয়েত নেতাকে সংস্কারের স্থপতি হিসেবে দেখা হয়। তিনি ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চলে আসা তীব্র উত্তেজনা তথা স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে ভূমিকা রাখেন। পূর্ব ও পশ্চিমের সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখায় তাঁকে ১৯৯০ সালে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়।
বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে